ভোটের আগে সিরিজ প্রশিক্ষণে যাচ্ছে ইসি
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরিজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এসব কর্মসূচি শুরু হবে। তার আগে আজ সোমবার ইসির এক কমিশন সভায় নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ২০২৩-২৪ সালের প্রশিক্ষণ বর্ষপঞ্জির খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে। ইসির একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আসাদুজ্জামান আরজু ইত্তেফাককে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ভোট সম্পৃক্তদের প্রশিক্ষণ দেওয়া নির্বাচনের একটি রুটিন ওয়ার্ক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এ ব্যাপারে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। তবে প্রশিক্ষণের দিনক্ষণ এবং এর বাজেট কমিশন সভায় নির্ধারণ হবে বলেও জানান তিনি।’
সূত্র জানায়, প্রত্যেক নির্বাচনের আগেই সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান ইসির একটি রুটিন কাজ। সেজন্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে এসব প্রশিক্ষণের প্রস্তাবিত বাজেট কতো হতে পারে সেটি এখনো নির্ধারণ হয়নি। আগামীকালের কমিশন সভায় এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতিকক্ষে এক সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ভোটকক্ষ প্রতি দুই জন পোলিং অফিসার মিলিয়ে কেন্দ্রে প্রতি অন্তত ১৪ থেকে ১৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনে অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার লোকবল প্রস্তুত রাখতে হবে। সব মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ লক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগে যত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকের প্রয়োজন হবে তার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি লোকবল বাছাই করে প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার) নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুত ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন অফিস/প্রতিষ্ঠান থেকে জরুরি ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহ করার জন্য ইসি সচিবালয় অক্টোবরের দিকে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠায়। প্যানেলভুক্ত করার জন্য নীতিমালা মেনে নির্ধারিত ছকে তপসিল ঘোষণার আগেই ইসি সচিবালয় ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পাঠাতে বলা হয়ে থাকে।
এর আগে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গির আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের পরই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তা চূড়ান্ত হবে। কাজগুলো আগে গুছিয়ে রাখা হচ্ছে, ডেটাবেজ করে রাখলে তা সুবিধা হবে। এছাড়া প্যানেল প্রস্তুত নির্দেশিকা ও নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বর্ষপঞ্জির খসড়াও কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে আগামীকালের কমিশন সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮ এর সংশোধন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন ২০১০ এর সংশোধন ও নির্বাচনকালীন অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য আপ্যায়ন বাবদ অর্থ প্রদান সংক্রান্ত গাইডলাইনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩ এ বর্তমানে যা রয়েছে সেটিই বহাল থাকতে পারে। বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি এবং অন্যান্য কমিশনাররা হাইকোর্ট ডিভিশনের একজন বিচারপতির সমান বেতনভাতা পেয়ে থাকেন। কমিশনারদের কেউ কেউ পেনশনসহ কিছু সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও সেটি শেষ পর্যন্ত থাকছে না। কারণ, কমিশনারদের প্রায় সবাই সরকারি অন্যান্য চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে থাকেন। তারা যেহেতু সেখানে অবসর সুবিধা পেয়ে থাকেন সেহেতু দ্বিতীয় বার অবসর সুবিধার আর সুযোগ থাকে না। আর স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন ২০১০ এর সংশোধন করে সেখানে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা এবং টিআইএন সার্টিফিকেট যুক্ত করার বিধান রাখা হতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক