ভূমির ডিজিটাল রূপান্তর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ : সিনিয়র সচিব
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন, ভূমির ডিজিটাল রূপান্তর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ভূমি ভবনের সম্মেলনকক্ষে ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা (ইডিএলএমএস) প্রতিষ্ঠা’ প্রকল্পের সফ্টওয়ার সংক্রান্ত কর্মশালায় সিনিয়র সচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর যুগে ভূমি ব্যবস্থাপনা খাতেও এসেছে ডিজিটাল রূপান্তর। বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে সরকার ইডিএলএমএস প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি ভূমি প্রশাসনকে করেছে স্মার্ট, ডিজিটাল ও নাগরিকবান্ধব। ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো ইডিএলএমএস। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক সেবায় গতি আনা। এ প্রকল্প জনসেবার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সিনিয়র সচিব বলেন, বর্তমান বিশ্বে জনসেবার কার্যক্রমকে দক্ষ, স্বচ্ছ ও নাগরিকবান্ধব করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। এটি ভূমি প্রশাসনকে করেছে স্মার্ট, ডিজিটাল ও নাগরিকবান্ধব। প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ প্রশাসনের দক্ষতা বাড়িয়েছে এবং জনসেবাকে করেছে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগে ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল ভূমি জরিপ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং জনগণকে দ্রুত ও নির্ভুল সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে ভূমির সঠিক সীমা, মালিকানা, ব্যবহার ও পরিমাপ নির্ধারণের প্রক্রিয়া। আগে এই জরিপ সম্পূর্ণ হতো হাতে লেখা মানচিত্র, কাগজে তৈরি খতিয়ান ও রেকর্ডের মাধ্যমে, যা সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এখন এই কাজ সম্পন্ন হচ্ছে দ্রুত, নির্ভুল এবং আধুনিক পদ্ধতিতে।
তিনি বলেন, বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির ফলে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অতীতের কাগজ-কলম নির্ভর ভূমি জরিপ এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে, যেখানে সফটওয়ারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কর্মশালায় প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে সফটওয়্যারের ব্যবহারবান্ধবতা ও নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক সুপারিশও প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এরই মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা আধুনিক বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ।
সিনিয়র সচিব আরও বলেন, ডিজিটাল ভূমি জরিপের সবচেয়ে বড় সুফল হলো ভূমির সঠিক পরিমাপ ও রেকর্ড সংরক্ষণ। আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে জরিপে মানবিক ভুল, অনিয়ম ও জালিয়াতির সুযোগ থাকত। এখন স্যাটেলাইট ও জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ব্যবহারের ফলে ভূমির আয়তন ও সীমানা নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ হ্রাস পাচ্ছে। যেহেতু রেকর্ড অনলাইনে সংরক্ষিত এবং যাচাইযোগ্য, তাই একাধিক মালিকানা দাবি বা নকল কাগজপত্র তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নাগরিকগণের সেবা সহজ ও দ্রুত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে। সব তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষিত থাকায় দুর্নীতির সুযোগ কমে গেছে এবং কর্মকর্তাদের কাজের ওপর নজরদারি সহজ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখছে ডিজিটাল ভূমি জরিপ। সঠিক ভূমি ডেটা থাকায় অবকাঠামো, কৃষি, বন, শিল্প ইত্যাদি খাতে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল ভূমি জরিপ বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি নাগরিকদের জন্য সহজ, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য ভূমি সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার ভিত্তি গড়ে তুলেছে।

