ভাষা শহিদদের রক্তদান কখনো বৃথা যেতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাঙালির যে অর্জন, আত্মত্যাগের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রক্তদান কখনো বৃথা যেতে পারে না। শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, যে কোনো সংগ্রাম এবং রক্তদান কখনো বৃথা যায় না। বৃথা যেতে পারে না। যদি সততার সাথে এগিয়ে যাওয়া যায় যে কোনো অর্জন করা সম্ভব। আর সেই অর্জনটা আমরা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং এর পেছনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সামনে এনে তিনি বলেন, আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি বলেই তো আজকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছি। আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি বলেই তো আমাদের ভাষার জন্য যারা রক্ত দিয়েছে সেই রক্তের মর্যাদা তারা পেয়েছে যে, আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের না, সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এই মহান আত্নত্যাগ, যার মাধ্যমে আমরা মহৎ অর্জন করতে পেরেছি, যেটা সব সময় জাতির পিতা বলতেন যে, মহৎ অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার। আর সেটাই আমরা করতে পেরেছি। আমাদের এই মর্যাদা নিয়েই চলতে হবে।
স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই। শিক্ষায়-দীক্ষায় সংস্কৃতি চর্চায় সবদিক থেকে এই বাঙালি নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বমহীমায়, স্বগৌরবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে এটাই আমাদের কামনা, এটাই আমরা চাই। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা শহীদ, স্বাধীনতা শহীদ সকলের প্রতি, জাতির পিতার প্রতি এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
একটি বিষয়ে সবাইকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই বাঙালি কিছু পায় বা তাদের মর্যাদা অর্জন করে বা বাঙালি এগিয়ে যেতে থাকে উন্নয়নের দিকে, তখনই কিন্তু আবার অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আবার আমাদেরই কিছু ভেতরে তো সব সময় থাকে এই ধরনের। এই বাঙালির মধ্যেই কিছু থাকবে যে এই অর্জনটাতো তাদের কাছে বোধহয় মনঃপুতই হয় না।
এরা পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ থাকতেই ‘পছন্দ করে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা শ্রেণি আছে তারা কখনও আত্নমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা আত্নমর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই আত্নতুষ্টি পায়। আর সেই শ্রেণিটা এখনও রয়ে গেছে আমাদের সমাজে। সেইজন্য যতই আমরা উন্নতি করি, যতই এগিয়ে যাচ্ছি, সারাবিশ্ব যখন সেই উন্নয়ন দেখে আমাদের দেশের কিছু লোক কিন্তু সব সময় অন্ধই থাকে, তারা তা দেখে না।
এসবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই অর্জনের কথা বলতে গেলেও যেন তাদের দ্বিধা। কিন্তু কেন তাদের ভেতরে এই ধরনের মানসিকতা সেটাই আমার মাঝে মাঝে নিজের কাছে অবাক লাগে। এবং আমার নিজের কাছে প্রশ্ন এরা কেন?
এ ধরনের মানসিকতায় যারা ভোগে তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা কিন্তু একটা কথা বলতেন যে বাংলাদেশের মাটি এত উর্বর এখানে যেমন অনেক ফসলও হয় আবার সেখানে পরগাছা, আগাছাও জন্মে। তো এই আগাছা থাকবে এটা ঠিক। কিন্তু এই আগাছা কি করতে হবে সেটা বাঙালিকে নিজেকেই ভাবতে হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট স্মরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদান এবং ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসকে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছে তারা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের জন্য তার যে অবদানটা, এটা হলো বাস্তব। এক সময়ের আমাদের বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানী, গুণী, তারা কিন্তু তাদের লেখা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা একেবারে মুছে ফেলেছিল।
তিনি যে ভাষার জন্য আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, শুধু তাই না লিফলেট করে সমগ্র বাংলাদেশে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং জেলায় জেলায় গিয়ে বক্তৃতা দিয়ে, মিটিং করে, সভা করে ছাত্রদের সকলকে নিয়ে সংঘটিত করা। সাধারণ মানুষের মাঝে মাতৃভাষা বাংলা এই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা এই মর্যাদা দেওয়ার যে চেতনা, তাতে উদ্বুদ্ধ করা, সেই কাজটি তিনি করেছিলেন।
বাঙালির অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবরণের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্ত থেকে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহমান, খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা বক্তব্য রাখেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ