November 22, 2024
আন্তর্জাতিক

ভারত সীমান্ত ঘেঁষে হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন

সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত অরুণাচল প্রদেশের স্পর্শকাতর সীমান্তে হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন। অঞ্চলটির কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে হেলিপোর্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

হেলিপোর্টটি নির্মিত হলে চীন খুব সহজে সামরিক সরঞ্জাম, সেনা বা লজিস্টিক সাপোর্ট দুর্গম ভারত সীমান্তে বা ক্ষেত্র বিশেষে অরুণাচল প্রদেশে পাঠাতে পারবে। এ ছাড়া সেখানে ভারী যুদ্ধাস্ত্র মজুতেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, সীমান্ত অঞ্চলটিতে যে কোনো সংঘাত মোকাবিলায় দ্রুত জবাব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে চলেছে চীন। ফলে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ থাকায় এ ধরনের পদক্ষেপে স্বভাবতই ভারত উদ্বিগ্ন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হেলিপোর্ট নির্মাণের একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বশাসিত তিব্বত অঞ্চলের নিয়াংচি প্রিফ্যাকচারের অন্তর্গত গংরিগাবু কিউ নদীর তীরে জোরেশোরে নির্মাণকাজ চলছে। অঞ্চলটিকে চীনের ভুখণ্ডের অন্তর্গত হিসেবে বিবেচনা করে নয়াদিল্লি। এই ভুখণ্ড নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো বিবাদ নেই।

এনডিটিভির প্রকাশ করা ছবিটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান মাক্সারের তোলা। ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের ছবিটিতে দেখা গেছে, হেলিপোর্ট নির্মাণকাজ প্রায় শেষের পথে।

এর আগে ইওএস ডাটা এনালিটিকসের ওপেন সোর্স স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো স্থাপনা ছিল না। তবে গত ৩১ ডিসেম্বরের ছবিতে দেখা গেছে, সেখানে নির্মাণকাজের জন্য জায়গা খালি করা হয়েছে। তবে তখনও ঠিক কী নির্মিত হবে তা অস্পষ্ট ছিল।

এ বিষয়ে জিওস্প্যাশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞ ড্যামিয়েন সাইমন বলেন, নতুন হেলিপোর্টের মাধ্যমে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) আরও সক্ষম হয়ে উঠবে। এ অঞ্চলে তারা গোয়েন্দা কার্যক্রম, নজরদারি ও গুপ্তচরবৃত্তির মাত্রা বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হবে। হেলিপোর্ট নির্মাণে দূরবর্তী এলাকায় খুব দ্রুত সেনা মোতায়েন করা যাবে। সঙ্গে টহলের উপযোগিতা ও এই দুর্গম, কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে চীনের সামরিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পাবে।

সীমান্ত নিয়ে গত মাস থেকে অস্বস্তিতে রয়েছে ভারত। এরই মধ্যে এ ধরনের খবর আশঙ্কার মাত্রা আরও বাড়াল। এর আগে গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তথা পিএলএ সেনারা অরুণাচলের অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছে। এ সময় তারা আনজাও জেলার কাপাপুতে একটি ক্যাম্পও স্থাপন করে। সেখানে কাঠে আগুন ধরানো, পাথরের গায়ে রঙ ব্যবহার করে লেখা চীনের নাম এবং চীনা খাদ্যসামগ্রীর ছবি দেখে বোঝা যায় আনুমানিক এক সপ্তাহ আগে চীনা সেনারা সেখানে ঘাট স্থাপন করেছিল।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চীনা সেনারা প্রবেশের পর পাথরের গায়ে চলতি বছরের চিহ্ন এঁকে দেয়। যা সাধারণত ভারতের কোনো অঞ্চল দখলের পর তা নিজেদের দাবি করার কৌশল হিসেবে করা হয়ে থাকে। খবরে বলা হয়, দুই দেশকে বিভক্তকারী ম্যাকমোহন লাইনের হাদিগ্রা পাসের কাছে কাপাপুতে ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে। আর আনজাও জেলার নিকটতম প্রশাসনিক এলাকা চাগলাগাম ম্যাকমোহন লাইন থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ ছাড়া চাগলাগাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পার্বত্য এলাকায় গ্লাইতাকরু পাসের অবস্থান।

অপরদিকে লাদাখে দিল্লির সমপরিমাণ ভূমি দখলে নিয়েছে চীন। ওই অঞ্চলে ভারত ভূখণ্ডের চার হাজার বর্গকিলোমিটারে চীনা সেনা অবস্থান করছে।

দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাদাখের ভূমি দখলের অভিযোগটি করেছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে দেওয়া ব্ক্তব্যে রাহুল গান্ধী এসব কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনকে ভালোভাবে সামলাতে পারছেন না। এ সুযোগে লাদাখে দিল্লির সমপরিমাণ ভূমি দখলে নিয়েছে চীন।

শেয়ার করুন: