‘ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের অন্তরায় সীমান্ত হত্যা’
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ প্রায়ই সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করে। এটাকে প্রতিবেশী দুই দেশের সুসম্পর্কের মধ্যে অন্তরায় হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। যখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সোনালি যুগ’ হিসেবে দেখা হতো তখনও এই সীমান্ত হত্যা হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে গতকাল ১৫ বছরের কিশোর জয়ন্ত কুমার সিংহ নিহত হয়। এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারে ১৩ বছর বয়সী কিশোরী স্বর্ণা দাস বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীর গুলিতে কিশোর-কিশোরী নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে নানা মহলে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত হত্যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করে। যখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় বলা হতো, তখনও সীমান্ত হত্যা হতো। সীমান্ত হত্যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো করার অন্তরায়।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রায় প্রতি মাসেই একাধিক ঘটনা ঘটে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্তে ফেলানী নামক তরুণীকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। সেই ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক থাকার পরও সরকার সীমান্ত হত্যা বন্ধে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকে বারবার সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভারত তা কখনো বাস্তবায়ন করেনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত হত্যা বন্ধে সোচ্চার হয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) একটি অনুষ্ঠানে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে সীমান্তে দায়িত্ব পালনকালে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সীমান্তে আর কোনো ফেলানীর লাশ দেখতে চান না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ বিজিবির মূল দায়িত্ব জানিয়ে সীমান্তে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে পিঠ প্রদর্শন করবেন না। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করুন।’
এর আগে গত ১৩ আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনও বিজিবিকে সীমান্তে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বিজিবির উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘বিজিবির মতো একটা ফোর্সকে (বাহিনী) পিঠ দেখাতে বলেছে সীমান্তে। সীমান্তে আমাদের লোক মারে, বিজিবি পতাকা বৈঠক করতে বাধ্য হয়। আমি বলেছি যে পিঠ দেখাবেন না। এনাফ ইজ এনাফ (যথেষ্ট হয়েছে)।’