ভারতকে ‘শুল্কের মহারাজ’ বললেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভারতকে ‘শুল্কের মহারাজ’ আখ্যা দিয়ে রাশিয়ার সস্তা তেল আমদানির মাধ্যমে মুনাফা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। তার দাবি, ভারত রাশিয়ার তেল শোধন করে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে, যা এক ধরনের ‘মানি লন্ডারিং’। আর এর জেরেই আগামী সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) হোয়াইট হাউজের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাভারো বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেমন কিছুই কিনত না, মোট চাহিদার এক শতাংশও নয়। এখন সেই হার বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ভারতের আসলে এই তেলের প্রয়োজনও নেই। এটি মূলত ‘মুনাফাভিত্তিক শোধনাগার ব্যবসা’।
ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই চাপ এমন সময়ে এলো, যখন নয়াদিল্লি স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ভারত সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমাতেও পদক্ষেপ নিয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়া সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার জবাবে বলেছেন, মার্কিনরা নিজেরাই কয়েক বছর ধরে বলেছে বিশ্ব জ্বালানি বাজারকে স্থিতিশীল করতে যা যা করা দরকার, তার মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনাটাও অন্তর্ভুক্ত। এরপরও ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকিতে নয়াদিল্লি বিস্মিত।
রাশিয়ার তেল বাণিজ্যে ভারতের অবস্থান
২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে জি-৭ দেশগুলো রাশিয়ার তেলের ওপর ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের মূল্যসীমা আরোপ করে। এরপর থেকেই ভারত ব্যাপক হারে রুশ তেল কিনছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই ক্রয়ে রাশিয়ার যুদ্ধ তহবিল বাড়ছে। মস্কোভিত্তিক ‘কাসাতকিন কনসালটিং’র তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ৩৭ শতাংশই এখন ভারতের কাছে যাচ্ছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া যখন বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে, তখন ভারত সস্তায় তেল কিনে নেয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে রাশিয়ার তেলের অংশ ছিল মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশে। এখন ভারতই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা।
নাভারোর অভিযোগ, ভারতীয় শোধনাগারগুলো সস্তা রাশিয়ান তেল কিনে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় ‘ভালো’ দামে বিক্রি করছে। এটি ‘মুনাফার খেলা’। এর ফলে রাশিয়া অস্ত্র বানিয়ে, ইউক্রেনীয়দের হত্যা করার সুযোগ পাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের ইউক্রেনকে সহায়তায় অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ভারত এই রক্তপাতের দায় অস্বীকার করতে পারে না।
এদিকে, শুধু রাশিয়া নয়, নাভারো ভারতের বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বেইজিং সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভারতের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন আরও বেড়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির কারণে। ভারতীয় পণ্যের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক বসিয়ে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো- রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।