বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র: এম সাখাওয়াত
রাষ্ট্র কাঠামোর অনেক বিষয় পরিবর্তন করতে হবে মন্তব্য করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, বৈষম্য দূর করার জন্য রাষ্ট্র চেষ্টা করছে। কিন্তু ধীরে ধীরে হবে।
আমাদের সমাজটা রিকনজারভেটিভ। এটা হইলো না কেন, ওইটা কেন হইলো, কেন করলো, অমুক এই কথাটা বললো কেন? আমরা খুব জটিল সমাজ ও জায়গায় আছি।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
মানবাধিকার প্রসঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য এই সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
সংলাপে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশকে দিয়েই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন শুরু হয়। ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন তাদের দেখে মনে হয়নি তারা আমাদের দেশের পুলিশ। এভাবে হত্যা কোনো বাঙালি পুলিশ করে? তখন আমি বারবার বলেছি, এরা আমাদের দেশের পুলিশ নয়। সেসব পুলিশের হাতে সাংঘাতিক মরণাস্ত্র ছিল, যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কারা, কেন, কোন সময় থেকে তাদের হাতে এই মরণাস্ত্র দিয়েছে, সেটাও তদন্ত হওয়া দরকার। কারণ, পুলিশের হাতে তো এই ধরনের অস্ত্র থাকার কথা নয়। আবার পুলিশের অস্ত্র কীভাবে সাধারণ পোশাক পরা মানুষের হাতে গেল, সেটাও বিশদভাবে তদন্ত হওয়া দরকার। তারা লুঙ্গি পরে, গেঞ্জি পরে ৭.৬২ রাইফেল নিয়ে অ্যাকশনে যুক্ত হয়েছিল। এরা কারা? আমি এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করব বলেছি, কিন্তু এখন আর তদন্ত করার মতো জায়গায় আমি নেই। তবুও আমি চেষ্টা করব।
পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো, যিনি যখন ক্ষমতায় যান, তিনি ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকেন, কুক্ষিগত করেন। এটা ১৯৭২ থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত দেখে আসছি। এটা বন্ধ করতে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট প্রয়োজন রয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটি নেই। সিভিল সোসাইটি কোনো দেশে না থাকলে যাকে আপনি ভোট দিয়ে বসাবেন সেও জনগণকে মারবে। যে কারণে সিভিল সোসাইটি তৈরি করা প্রয়োজন। আমাদের সিভিল সোসাইটি এই দল, ওই দলে ভাগ হয়ে গেছে। যারা নিরপেক্ষ জায়গা থেকে কথা বলবে সবার জন্য। যে দেশে সিভিল সোসাইটি নেই, সেই দেশে এমন হবেই। আজকে যদি আমাদের শক্ত সিভিল সোসাইটি থাকতো, আর ১০০ জন দাঁড়িয়ে যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলতো, আওয়ামী লীগ কতজনকে ধরতো?
তাই সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, পুলিশকে দানব থেকে মানবতার পুলিশ করতে চাইলে অবশ্যই পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। পুলিশ নিজেরাও পরিবর্তন হতে চাইছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৯৯ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। একই সময়ে ৬৭৭ গুমের শিকার হয়েছেন। কেন ১ হাজার ৪৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কাস্টডিতে। শুধু এই সময়ের অবস্থা দেখেন। এটা একটা (আওয়ামী লীগ সরকার) ড্রাকুনিয়ান (নিপীড়নমূলক) সরকার।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান, গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, নারী অধিকার কর্মী ইলোরা দেওয়ান, মায়ের ডাকের আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট দিলরুবা শরমিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার রীতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া, জি-৯ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, মানবাধিকারকর্মী অ্যাড. এলিনা খান, ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি জয়া শিকদার প্রমুখ।