November 25, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

বিদ্যুৎ খাত অস্থিতিশীল করার চেষ্টা রুখতে কঠোর সরকার

ঘোষণা ছাড়াই বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় পল্লী বিদ্যুৎ শাটডাউনের চেষ্টা করা হয়। দুই দফা দাবিতে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আন্দোলনে ভোগান্তিতে পড়েন কোটি গ্রাহক। কোথাও কোথাও পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এভাবে হুট করে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে জাতীয় গ্রিডও। এই অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা রুখতে কঠোর হচ্ছে সরকার।

এভাবে জিম্মি করে দাবি আদায়ের প্রচেষ্টার পেছনে কুচক্রি মহলের হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়া ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসররা এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ছয়জন কর্মকর্তাকে। আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডেও পেয়েছে। এই অপচেষ্টার পেছনে আর কারা রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে সেটা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ১৩ জেলার ২২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কোটি গ্রাহক।

কর্মকর্তারা ‘অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত’দের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না হলে ঢাকায় পদযাত্রার হুমকি দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম সমাধানের আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত হয়। বিক্ষোভের পর, বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। অনেক জায়গায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব, জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়।

আন্দোলনের নামে এই হঠকারিতাকে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে সরকার। এজন্য বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড খিলক্ষেত থানার পরিচালক প্রশাসন (আইন শাখার) আরশাদ হোসেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা/কর্মচারী একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচয়ে পরস্পর যোগসাজশে জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে মিলে এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের মদদে নানান অযৌক্তিক দাবি দাওয়ায় ষড়যন্ত্র করে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত আছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করার শামিল। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানহানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা তথা জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা, যা দেশদ্রোহিতার শামিল।

দুই মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) নেতৃত্ব দেওয়া ছয় কর্মকর্তাকে আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) আদালতে তুললে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- মুন্সিগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রাজন কুমার দাস, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাহাত, নেত্রকোনার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বেলাল হোসেন। এদের মধ্যে বেলাল হোসেন একটি মামলার আসামি। অপর পাঁচজন আরেক মামলার আসামি।

সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। কোনোভাবেই যেন আন্দোলনের নামে বিদ্যুৎব্যবস্থাকে অচল করে দিতে না পারে এ জন্য সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের এই কঠোরতায় আতঙ্কে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করছেন, তাদের দাবি যৌক্তিক। এই দাবিতে কর্ণপাত না করে সরকার উল্টো তাদের ওপর ধরপাকড় চালাচ্ছে।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) আন্দোলনের সমন্বয়ক এজিএম আব্দুল হাকিম ও এজিএম সালাউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন ও অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহক সেবা চালু রেখেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে অহিংস আন্দোলন করে আসছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি কর্তৃক বিনা কারণে ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও ১০ জনের নামে মামলা করা হয়। চলমান সংকট নিরসনে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের এই আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী লীগের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু বলেন, শেখ হাসিনা যখন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করছিলেন তখন তো আপনারা মাঠে নামেননি। আপনারা আন্দোলন সংগ্রাম করবেন ঠিক আছে কিন্তু মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়। দয়া করে মানুষকে কষ্ট দিবেন না, দুর্ভোগে ফেলবেন না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মীর সরাফত আলী সপু বলেন, বৃহস্পতিবার সারাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা তাদের দাবি দাওয়ার নামে ধর্মঘট করেছেন। এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? এ সরকারকে ব্যর্থ বানানোর চেষ্টা করবেন না।

শেয়ার করুন: