February 22, 2025
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসিকে ওএসডি

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে (যা বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত) জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ওএসডি (অফিস আদেশ) করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এদিন, বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ছয়টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে ছয়জন করে এবং একটি প্রজ্ঞাপনে তিনজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর যেসব পুলিশ সুপার (এসপি) ও ইউনিট প্রধানরা বিপিএম ও পিপিএম পদক পেয়েছিলেন, তাদের পদকও বাতিল করা হয়েছে। তবে, এসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র ‘জনস্বার্থে’ এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন সূত্র জানায়, ওএসডি হওয়া এসব কর্মকর্তারা বর্তমানে যুগ্মসচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে, একই কারণে আরও ১২ জেলা প্রশাসককে ওএসডি করা হয়েছিল।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৮টি আসনে জয়ী হওয়ার কথা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৮০.২০ শতাংশ দেখানো হয় এবং আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের ৭৪.৪৪ শতাংশ। নির্বাচনের কয়েক দিন পর নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়— ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ এবং ১,৪১৮টি কেন্দ্রে ৯৬ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) এক গবেষণায় বলা হয়, ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতে কোনো না কোনো অনিয়ম হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট প্রদানের হার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার ‘নির্বাচননামা’ বইয়ে বিস্তারিতভাবে বলেছেন, এই নির্বাচনের ভোটের পরিস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক। তার মতে, জনগণের কাছে এই নির্বাচন ‘রাতের নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের নেপথ্য নায়ক ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসকরা, যারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা।

এছাড়া, ওই নির্বাচনে মোট ৪০,১৮৩টি ভোটকেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীসহ মোট সাত লাখের বেশি সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর রাজনৈতিক মতাদর্শও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যাচাই করে ছিল, এবং তাদের উপর বিরূপ মন্তব্য থাকার কারণে অনেক কর্মকর্তাকে ভোটের বাইরে রাখা হয়েছিল।

শেয়ার করুন: