বিএসসি-ডিপ্লোমাদের সমঝোতায় কমিটি, আন্দোলন না করার প্রতিশ্রুতি
আন্দোলনরত বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবি নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য দুপক্ষের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটির গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত আর আন্দোলন না করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
প্রকৌশলীদের দুটি পক্ষ আন্দোলন করছেন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবি, বিএসসি প্রকৌশলী দাবি সাত দফা। আজকে আমরা দুপক্ষের অভিভাবকদের সঙ্গে বসে ছিলাম। আমরা বলেছি আপনারা নিজেদের পরিচয় ভুলে আমাদের পরামর্শ দেবেন, যাতে কীভাবে আমরা একটি সেতু গড়তে পারি। আজকে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষসহ প্রকৌশলীদের দুটি পক্ষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। মোট ৬০ জন এসেছিলেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্দোলনরত দুই পক্ষের দাবিগুলো খানিকটা পরস্পর বিরোধী। একজনেরটা গ্রহণ করলে আরেক জন অসন্তুষ্ট হবেন, অন্যজনেরটা গ্রহণ করলে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে একটা সেতু গড়ে তোলা যায়, সেই চেষ্টা করেছি। আমরা নিজেদের থেকে নয়, ওনাদের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।’
‘এ কমিটি কাজ করবে যাতে দু-পক্ষের মধ্যে একটা সেতু গড়া যায়। পরস্পর বিরোধী বিষয়গুলো নিয়ে কিভাবে একমত হওয়া যায়। অনেকটা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতো। নিজেরা নিজেরাই সমাধান করলে সেটা হল শ্রেষ্ঠ সমাধান।’
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ওনারা এটাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- ওই কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত তারা আর কোনো আন্দোলন করবেন না। রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগ হয় এ রকম কোনো কাজেও ওনারা লিপ্ত হবেন না।’
কমিটিতে কেউ সভাপতি থাকবেন না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের একজন প্রতিনিধি, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের একজন শিক্ষক, আন্দোলনকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একজন প্রতিনিধি। একইভাবে অপরপক্ষ থেকেও তিনজন প্রতিনিধি থাকবেন।
‘কোন পদবিধারীরা কি লিখবেন সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। তবে সেটা নিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। উনাদের কাছ থেকে আমরা তিনটি পরামর্শ পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা পরামর্শ হলো- যারা বিএসসি ডিগ্রিধারী তারা ইঞ্জিনিয়ার লিখবেন, অন্যরা নামের আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার লিখবেন। আরেকটি প্রস্তাব হচ্ছে- নামের আগে কেউ কিছু লিখবেন না। নামের পরে লিখবেন। সেখানে বিএসসি বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, সেটি লিখতে হবে। তৃতীয় প্রস্তাব হচ্ছে কেউই কিছুই লিখবেন না।’
ফাওজুল কবির খান বলেন, কমিটি রিপোর্ট দিলে, আমরা সেটা পর্যালোচনার পর আমাদের সুপারিশ প্রণয়ন করে সেটা সরকারকে দেব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মূল সমস্যাটা হচ্ছে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থানের অভাব। এটা জাতির জন্য একটা বিরাট ক্ষতি। এজন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শূন্য পদগুলো অবিলম্বে পূরণ করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছি। ওনারা এটা করতে শুরু করবেন।’
‘আমাদের ভাবতে হবে বিদেশিরা কতদিন এসে সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সড়ক বানিয়ে দিয়ে যাবে। এজন্য আমরা উপায় বের করব, যাতে যে সব বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসে, তারা যাতে একটা নির্দিষ্ট অনুপাতে বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং টেকনোলজি নেন’ বলেন তিনি।
আজকেও ঢাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রকৌশলীরা আন্দোলন করেছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি জানি, ওনারা তো বলে দিয়েছেন, আজকে থেকে ওনারা আন্দোলন উঠিয়ে নেবেন। মুরুব্বিরা সেই দায়িত্ব নিয়েছেন, এখানে তো সবাই ছিলেন।’
আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছি- এখন নির্বাচন সামনে আছে, আমরা চাই না রাস্তায় জনদুর্ভোগ হোক এমন কোন কর্মসূচি কেউ দিক। আমরা তো কারো পক্ষের সরকার নই। আমরা তো সবার সরকার। আমরা নিরপেক্ষভাবে যেটা ন্যায্য যেটা করা উচিত সেটা আমরা করব।’
এরপর দাবি যাচাই-বাছাই কমিটি ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংস্থা প্রধানদের সঙ্গে বসবে। কমিটি এ পর্যন্ত তিনটি বৈঠক করেছে বলেও জানিয়েছেন কমিটির প্রধান ফাওজুল কবির খান।