বাফুফের নিলামে সর্বোচ্চ ১৩ লাখে বসুন্ধরা কিংসের ঘরে গোলকিপার আসিফ
কেউ বলছেন, ঐতিহাসিক দিন। কারও ভাষায়, বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক অধ্যায়। যে অধ্যায়ের শুরু হলো আজ ঢাকার একটি হোটেলে। এই প্রথম দেশের ফুটবলে নিলামে তোলা হলো ১০ তরুণ ফুটবলারকে। ১০ ফুটবলারের ৯ জনই বিক্রি হয়ে যান প্রথম রাউন্ডে। বাকি জন বিক্রি হন দ্বিতীয় রাউন্ডে।
প্রিমিয়ারে ফিরে আসা ব্রাদার্স ইউনিয়ন সবচেয়ে সক্রিয় ছিল নিলামে। ১০ তরুণ ফুটবলারের ৬ জনকেই নিয়েছে তারা। শেখ রাসেল, বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী ও ফর্টিস এফসি নিয়েছে একজন করে। মোহামেডান এর আগে বাফুফের কাছে চিঠি দিয়ে একাডেমির খেলোয়াড় চাইলেও নিলাম থেকে তারা কোনো খেলোয়াড় নেয়নি।
নিলামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ১১ দলের ৮টি অংশ নিয়েছে। মোহামেডান ছাড়াও খেলোয়াড় কেনেনি শেখ জামাল ও পুলিশ এফসি। তবে উপস্থিত থাকলেও নিলামপ্রক্রিয়ায় অংশই নেয়নি রহমতগঞ্জ, গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং। নিলামে চট্টগ্রাম আবাহনীর কোনো প্রতিনিধি দেখা যায়নি।
নিলামের জন্য বাফুফের এলিট একাডেমির ১০ তরুণ ফুটবলারকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬ জনের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা। ‘বি ক্যাটাগরির ৪ জনের ভিত্তিমূল্য ৪ লাখ টাকা। নিলাম শেষে মঞ্চেই সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে পেতে বাফুফের সঙ্গে ক্লাবগুলোর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এক বছরের জন্য।
নিলামে সর্বোচ্চ ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছেন ৫ লাখ টাকা ভিত্তিমূল্যের একাডেমির গোলকিপার মোহাম্মদ আসিফ। বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী, ব্রাদার্স বিডিংয়ে অংশ নিয়েছে তাঁকে পেতে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছেন ১৭ বছরের মিডফিল্ডার চন্দন রায়। বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে ৬টি ম্যাচ খেলা এই নবীনকে পেতে ফর্টিস ও ব্রাদার্সের সঙ্গে বিডিং করে জিতেছে শেখ রাসেল।
দ্বিতীয়জন হিসেবে নিলামে তোলা ১৭ বছরের রাইটব্যাক রুবেল শেখ অবিক্রীত থেকে যান প্রথম রাউন্ডে। তবে পরপরই তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তোলা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার আসাদুল মোল্লাকে নিয়ে আবাহনী-ফর্টিস টানাটানি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাকে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় পেয়েছে ঢাকা আবাহনী।
চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে নিলামে তোলা ১৭ বছরের সেন্টারব্যাক ইমরান খানকে শুধু ব্রাদার্স চেয়েছে। ৪ লাখ ভিত্তিমূল্যেই ইমরানকে পেয়েছে ব্রাদার্স। ৫ম খেলোয়াড় সাজেদ হাসানকে ব্রাদার্স ও শেখ জামালের সঙ্গে বিডিং করে ফর্টিস পেয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায়।
১৮ বছরের লেফটব্যাক আজিজুল হককে ব্রাদার্স ভিত্তিমূল্য ৫ লাখেই বিড করে। কিন্তু মোহামেডান দাবি করে, তারা ৫ লাখ ২৫ ডেকেছে। ততক্ষণে আজিজুলকে ব্রাদার্স পেয়েছে বলে ঘোষণা হয়ে যায়। এ সময় ক্ষুব্ধ মোহামেডানের প্রতিনিধিরা নিলাম থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন। শেষে আজিজুলের বিডিং স্থগিত করা হয়। প্রথম রাউন্ড শেষে অবশ্য ১০ লাখ টাকায় আজিজুলকে পেয়েছে ব্রাদার্স।
সেন্টার ফরোয়ার্ড সুমন সরেনকে ভিত্তিমূল্য ৪ লাখেই পেয়েছে ব্রাদার্স। ডিফেন্ডার সিরাজুল ইসলামকেও ভিত্তিমূল্যের ৪ লাখ টাকায় পেয়েছে ব্রাদার্স। সর্বশেষ গত লিগের দ্বিতীয় পর্বে মোহামেডানে যাওয়া ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলামকে শেখ জামাল ও আবাহনীর সঙ্গে বিডিং করে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় পেয়েছে ব্রাদার্স।
নিলাম শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন বাফুফের সহসভাপতি ও ডেভেলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা বাফুফে এলিট একাডেমি চালু করি। উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় দলের জন্য পাইপলাইন তৈরি করা।’
বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন ছিলেন উচ্ছ্বসিত, ‘একাডেমি নিয়ে আমাদের সমালোচনা হয়েছে অনেক। সেটাকে আমরা কানে তুলিনি। আমরা ভেবেছি যে একটি একাডেমি আমরা করতে পারব। সেটা করতে পেরেছি। এবং সেখান থেকে খেলোয়াড় বেরোচ্ছে। এটা ভালো দিক।’
ক্রীড়া সংবাদদাতা