বাড়ছে এইচআইভি রোগী, তরুণীরা বেশি সংক্রমিত
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।
সংস্থাটির মতে, আক্রান্তদের মধ্যে নারী এবং তরুণীদের সংখ্যা বেশি। নতুন করে এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য এইচআইভি প্রতিরোধ করতে না পারা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার অভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব এইডস দিবসের আগে শনিবার (৩০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, ২০২৩ সালে ১৫-১৯ বছর বয়সী ৯৬ হাজার মেয়ে এবং ৪১ হাজার ছেলে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে বিশ্বব্যাপী আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের ফলে এইডসে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। এখন সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে এইডস আক্রান্ত হলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকছেন আক্রান্তরা।
ইউনিসেফের এইচআইভি/এইডস-এর সহযোগী পরিচালক অনুরিতা বেইনস বলেছেন, শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা প্রতিরোধ পরিষেবা এবং এইসড রোগের চিকিৎসা সঠিকভাবে পাচ্ছে না। এইচআইভি আক্রান্ত শিশুদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং সবার জন্য চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এইচআইভি আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষ অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির পাচ্ছেন। এই থেপারিকে এইডস রোগের ভালো প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে ১৪ বছর ও তার কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৫৭ শতাংশ এবং ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী এই ওষুধ পাচ্ছেন। ফলে তাদের নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ১৪ বছর বা তার কম বয়সী এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মাত্র তিন শতাংশ হলেও ২০২৩ সালে এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যুর ১২ শতাংশই এই বয়সী শিশু।
ইউএনএইডস’র প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় এক দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ এই এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের হুমকি হিসেবে এইডস রোধের জাতিসংঘের যে লক্ষ্য, সেখানে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার চেয়ে এই সংখ্যা অন্তত তিনগুণ বেশি।
এছাড়া ২০২৩ সালে এইডসে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছে। যদিও এই সংখ্যা ২০০৪ সালের পর সর্বনিম্ন।
অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসার ফলে এই মৃত্যুহার কমছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ। যাদের মধ্যে প্রায় ৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষই চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়েছে।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিচারে এইডস রোগীর সংখ্যা বেশ কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশেরও কম। দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। ২০২৩ সালে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২৭৬ জন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে নতুনভাবে এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বয়স ২৫-৪৯ বছর এবং ২১ শতাংশের বয়স ২০-২৪ বছর। নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, এক শতাংশ নারী যৌনকর্মী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন এক শতাংশ।
এসব নতুন রোগীর ৫৫ শতাংশ বিবাহিত এবং ৪০ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪০৬ জন, চট্রগ্রামে ৩২৬ জন, খুলনায় ১৫৪ জন এবং রাজশাহীতে ১৪৭ জন রয়েছেন।
এইডসের চিকিৎসার জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেন। তবে তাদের নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ নিতে হয় এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। বড়দের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধ থাকলেও শিশুদের জন্য দেয়া হয় সিরাপ।
কোনো রোগীর এইডসের পাশাপাশি অন্য কোন শারীরিক জটিলতা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তাকে ওই রোগের চিকিৎসা নিতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের ২৩টি জেলায় সরকারি হাসপাতাল, এনজিও ডিআইসি, কারাগারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ১৩টি কেন্দ্র থেকে আক্রান্তদের ওষুধ প্রদান করা হয়।