November 24, 2024
লেটেস্টশীর্ষ সংবাদসম্পাদকীয়

বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘট প্রসঙ্গে

গতকাল জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, আগামী ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ থাকবে। এই ঘোষণা এসেছে বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ হতে। রোববার (৯ জুলাই) দুপুরে জ্বালানি তেল বিক্রির উপর কমিশন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব শেখ ফরহাদ হোসেন।

 

অ্যাসোসিয়েশনের দাবি তিন দফা। ১. জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির ইকোনমিক লাইফ ৫০ বছর করতে হবে। ২. জ্বালানি তেল বিক্রির উপর কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করতে হবে। ৩. জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট বিধায় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুস্পষ্ট গেজেট প্রকাশ করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য হলো, জ্বালানি তেল বিক্রির উপর ডিলার্স কমিশন বৃদ্ধির দাবি জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। তবে বারবার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। অ্যাসোসিয়েশনের যুক্তি হলো, জ্বালানি তেলের মূল্য যখন ৬০ টাকা ছিল তখন যে হারে কমিশন প্রদান করা হতো, তেলের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ার পরও প্রায় একই হারে কমিশন প্রদান করা হচ্ছে। অথচ তেল কেনার জন্য ডিলার/এজেন্টদের দ্বিগুণ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। অপরদিকে, জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে কর্মচারীদের বেতন বেশকিছুটা বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এছাড়া সকল লাইসেন্স ফি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিসহ ট্যাংকলরির পার্টসের মূল্যে দ্বিগুণ হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের কথা হলো, যেখানে অটো গ্যাস স্টেশন (খরচ) প্রতি লিটার ৪৬.৫০ টাকা বিক্রি করে ৮ টাকা অর্থ্যাৎ ১৭ শতাংশ কমিশন পাচ্ছে, সেখানে ১৩০ টাকা পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করে ৪ টাকা অর্থাৎ তাঁদের ৩ শতাংশ কমিশন দেয়া হচ্ছে। ফলে এলপিজি থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের নূন্যতম কমিশন দেয়া হচ্ছে এবং যা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় অবস্থান করছে।

 

এছাড়াও তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পর থেকে তেল বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে, কারণ বিক্রির উপরই তাঁদের কমিশন নির্ভরশীল। অথচ সংশ্লিষ্টরা সব কিছু অবগত আছেন এবং তাঁদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে কমিশন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ও সুপারিশ পেশ করে শুধু সময়ক্ষেপণ করে চলেছেন। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা আশাহত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, একমাত্র জ্বালানি তেল ক্রয় এবং বিক্রি সরকার নির্ধারিত অভিন্ন মূল্যে হয়ে থাকে। জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর সরকার নির্ধারিত হারে কমিশন প্রদান করে থাকে। ফলে ফিলিং স্টেশনের আয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। জ্বালানি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে জ্বালানি তেল ক্রয় পূর্বক সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে স্বল্প কমিশন পেয়ে থাকে। ফলে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা শতভাগ কমিশন এজেন্ট। তাই জ্বালানি তেল বিপণন কাজে নিয়োজিতদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গেজেটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবসায়ীদের অবস্থান/মর্যাদা কমিশন এজেন্ট ঘোষণার জোর দাবি জানান তারা। তাঁদের যুক্তি হলো, এক্ষেত্রে দ্বৈত লাইসেন্সসহ বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। এরূপ হলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক ফিলিং স্টেশন সংক্রান্ত এসআরও এককভাবে জারির প্রবণতাও হ্রাস পাবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব বিপিসি বা জ্বালানি কোম্পানি বহন করবে। অ্যাসোসিয়েশনের পরিস্কার কথা হলো, তিন দফা দাবি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত সকল জ্বালানি ব্যবসায়ী জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহনে তাঁরা বিরত থাকবেন।

 

অ্যাসোসিয়েশনের দাবি তিন দফা দাবির বিপরীতে, আমাদের বক্তব্য খুব পরিস্কার। এমনিতেই বৈশ্বিক নানা দুর্যোগ দুর্বিপাকের প্রতিক্রিয়া স্বরুপ দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে আকাশ স্পর্শ করছে। কোনোক্রমেই মানুষ যেন তাঁর তাল সামলাতে পারছেন না। এরকম একটি বিরুপ পরিস্থিতিতে, সবচেয়ে বেশী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এই যখন প্রতিদিনের চালচিত্র, সেখানে যদি ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের ধর্মঘট শুরু করে দেন, তাহলে সেটি হবে মড়ার উপর খড়ার ঘায়ের মত। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিতে চাই। বিশেষ করে সরকারের দসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কালবিলম্ব না করে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখার আহবান জানাই। আশা করি সংকট ঘনিভুত হওয়ার আগে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান সূত্র বের হয়ে আসবে।

শেয়ার করুন: