November 23, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখন ‘অনেক শক্তিশালী’ : প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখন ‘অনেক শক্তিশালী’, তাই এখন আর বিদেশিদের কাছে ‘হাত পাততে হয় না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি এখন, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে, করোনাকালেও ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা আসলে বন্ধ করেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা। কাজেই আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে আমরা এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা ‘দিয়ে যাওয়ার’ কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে যে সমস্ত বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে সেখানে বহু মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন, যার মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে পাশপাশি জ্ঞান অর্জন হচ্ছে। প্রযুক্তিরর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, দেশে বিভিন্ন হাইটেক পার্ক থেকে শুরু করে যা কিছু তৈরি করা হচ্ছে তার ফলে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা জ্ঞান অর্জন করতে পারছে।
নতুন প্রজন্মকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে মন্তব্য শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যত বংশধরদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশ অর্থাৎ ২০৪১ এর উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সকলকে মনোনিবেশ করতে হবে যে, কীভাবে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
গবেষকদের সর্বোচ্চ শ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের দেওয়া রাজস্ব থেকে আপনাদের ফেলোশিপ এবং গবেষণা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। আপনাদেরকেও, যারা ফেলোশিপ পাচ্ছেন, সর্ব্বোচ্চ শ্রম ও দায়বদ্ধতা নিয়ে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা চাই দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তুলতে। কারণ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন। তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে।
কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশপাশি শিল্পায়নের গুরুত্বের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ‘দরজায় কড়া নাড়ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেজন্য উপযুক্ত দক্ষ মানব শক্তিও আমাদের গড়ে তুলতে হবে এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আপনাদের সহয়োগিতা করে যাচ্ছি এবং আপনাদের কাছ থেকে চাই দেশের মানুষ যেন সহযোগিতা পায়। কারণ আপনাদের উদ্ভাবনী জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ যেন মানুষের কল্যাণে হয়। কাজেই যারা আজকে গবেষণা করছেন সেই গবেষণার কী ফলাফলটা হলো সেটাও আমি দেখতে চাই। কারণ আমি মনে করি, এই মেধা কাজে লাগিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
গবেষণা না থাকলে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব হত না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে আমরা উন্নতি করতে পারতাম না যদি গবেষণা না থাকত। এইজন্য আমি গবেষণাকে সব থেকে গুরুত্ব দেই। বিশেষ করে বিজ্ঞানের গবেষণা ও মেডিক্যাল সায়েন্সের গবেষণা। মেডিকেলের উপর আমাদের গবেষণা একটু কম। সেখানে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি যে, আরও বেশি করে আমাদের গবেষণা করতে হবে। কাজেই গবেষণার উপর আমি গুরুত্ব দিই।
দেশের ‘৭০ শতাংশের কাছাকাছি’ মানুষ করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মহামারী পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। টিকা এখন সবাইকেই নিতে হবে। এর আগে আমি দেখেছি অনীহা। কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি মানুষের মধ্যে আগ্রহ হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা স্বাভাবিকভাবে চলবে। কিন্তু সেই সাথে সাথে টিকা। আমরা প্রাইমারি পর্যন্ত কোন বয়স পর্যন্ত টিকা দেওয়া যেতে পারে, আমরা ১২ বছর পর্যন্ত দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ডব্লিউএইচওর কাছে আবেদন করা হয়েছে যে আরও অল্প বয়সের শিশুদের জন্য টিকা দেওয়ার অনুমতিটা আমার মনে হয় এটা ইতোমধ্যে এসে যাবে। কাজেই তখন আমরা সকলকে টিকা দিতে পারব।
সরকারপ্রধান বলেন, অন্তত ৭/৮ বছর থেকে বা ৮ বছর থেকে বা ১০ বছর থেকে যদি দিতে পারি, তাহলে আমাদের প্রাইমারিতে আর কোনো অসুবিধা হবে না। তারাও খুব নিশ্চিন্তে যেতে পারবে। তবে আমরা স্কুল খুলে দিচ্ছি। সেগুলো চালু হচ্ছে। সাথে সাথে তাদের সুরক্ষটা একান্তভাবে দরকার। সেটা আমরা করব। কাজেই এক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানও বক্তব্য দেন।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *