বাঁধ মেরামত হলেও পাইকগাছার দুর্গত ১৫ গ্রামে কমেনি দুর্ভোগ
অবশেষে খুলনার পাইকগাছার দেলুটির কালিনগরের ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করেছেন এলাকাবাসী। পাঁচ দিন পর সোমবার (২৬ আগস্ট) এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিজেদের চেষ্টায় বাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করেন।
এদিকে টানা ৫ দিন পানিবন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে আছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।
পাইকগাছা হরিণখোলা গ্রামের অনিক গোলদার বলেন, রাতে দেখে এসেছি বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে এখনও পানিতে প্লাবিত আছে গ্রামের পর গ্রাম। এখানকার অসংখ্য মানুষের কাঁচা ঘর পানির চাপে ভেঙে গেছে। লবণ পানিতে তলিয়ে ঘের-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরহারা মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। থাকার জায়গা না থাকায় রাস্তায় কোনো রকমে থাকছেন মানুষ। পলিথিন বা তাবুও নেই। পরনের কাপড়ের সংকট। এছাড়া মানুষের খাবার সংকট তো আছেই। অনেকে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার দিচ্ছেন৷ শিশু ও বৃদ্ধরা তা খেয়ে থাকতে পারছেন না। সবমিলিয়ে তারা অনেক দুর্ভোগে আছেন।
তিনি বলেন, সবাই মিলে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও সেটি টেকসই না। এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ দরকার। সেটি না হলে যে কোনো সময় বাঁধ আবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় হাজার হাজার মানুষের চেষ্টায় পাঁচ দিনে বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। সেখানে এখন পানি ঢুকছে না। তবে সম্পূর্ণরূপে মেরামতে সময় লাগবে। রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়েছে। এখন মাটি দিয়ে সেটি সম্পূর্ণ মেরামত করা হবে।
তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কালীনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ী, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রাম এখনও প্লাবিত আছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষের কাঁচা ঘর-বাড়ি পানিতে বিধ্বস্ত। এলাকার বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এছাড়া সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় তিনটি বহুতল ভবন, একটি একতলা ভবন ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে রাস্তার পাশেই থাকছেন। এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি টয়লেটগুলোও প্লাবিত হওয়ায় লোকজন চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা অব্যাহত আছে। এখানে এসে রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশরা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, পানি টান দিলে (নামলে) আরও কিছু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বীজতলা তলিয়ে গেছে। এখন এসব সমস্যা দূর করতে হবে এবং মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনিন জানান, পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় ১৩টি গ্রামের সব কাঁচা ঘরবাড়িই ধসে পড়েছে। তবে পানি না নামা পর্যন্ত এই সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে গত ২২ আগস্ট উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে ২২ নম্বর পোল্ডারের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েন ১৫ হাজার মানুষ।