বর্ষায় মৌসুমী বেকার হাওরের মানুষ
কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা নিকলী, মিঠামইন ও ইটনার হাওরজুড়ে এখন শুধু থৈ-থৈ পানি। যেদিকে চোখ যায় পানি। পানিবেষ্টিত হাওরের ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী। শুষ্ক মৌসুমে তুমুল ব্যস্ত থাকলে বর্ষায় পাঁচ মাস কাটে বেকার সময় তাদের।
জেলা পরিসংখ্যান অফিস জানায়, নিকলী উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন (নিকলী সদর, সিংপুর, দামপাড়া, কারপাশা, জারুইতলা, গুরুই ও ছাতিরচর), মিঠামইন উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন (মিঠামইন সদর, গোপদিঘি, ঢাকী, ঘাগড়া, কেওয়ারজোড়, কাটখাল ও বৈরাটি) ও ইটনা উপজেলার আটটি ইউনিয়ন (ইটনা সদর, বড়িবাড়ী, বাদলা, চৌগাংগা, এলংজুরী, মৃগা, ধনপুর ও রায়টুটী) নিয়ে হাওর গঠিত।
হওরবাসীরা জানায়, হাওরের মানুষের ব্যস্ত সময় কাটে (কার্তিক মাস থেকে বৈশাখ মাস)। এ সময়টাতে জমিতে ধান রোপণ, জমির পরিচর্যা ও ধান কেটে শুকিয়ে বাড়ির গোলায় তুলতে ফুসরত মেলে না। এ সাত মাস সূর্য উদয় থেক অস্ত যাওয়া পর্যন্ত পরিশ্রম আর ব্যস্ততা ঘিরে রাখে হাওরবাসীকে। কিন্তু ঘরে ধান তোলা শেষ হওয়া মাত্রই বেকার হয়ে যায় তারা। এরপর তাদের আর তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময়ে মাঠে বর্ষার পানি আসতে থাকায় এ বেকারত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।
সিংপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদীঘা গ্রামের জেলে ফুরকান মিয়া জানান, নদীতে মাছ নাই, জাল বাইব কেমনে, তাই আমরা আজাইরা মানুষ (বেকার)। আজাইরা থাকতে ভালা লাগে না। তাস খেলে সময়টা কাটায়।
সিংপুর বাজারে চায়ের দোকানে বসে থাকা মুখলেস মিয়া জানান, কিতা করুম? ঘরে বসে দিনটা তো যায় না। তাই চার দোকানে সিডিতে সিনেমা দেখেই সময় কাটাই।
বাড়ির পুরুষদের মতো পরিবারের নারী সদস্যরা বেকার হয়ে পড়েন। তখন তারা লুডু খেলে সময় কাটান। কেউ কেউ বাড়ির পাশে হাওরের পানিতে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরে।
দামপাড়া ইউনিয়নের বরকান্দা গ্রামের গৃহবধূ জুনু আক্তার জানান, ধানের মৌসুমে মানুষের ক্ষেতে কাজ করে দিন কেটে যায়। কিন্তু বর্ষায় দিন কাটতে চায় না। তাই বঁড়শি দিয়ে মাস ধরে সময়ও কাটাই, তাছাড়া সংসারের মাছের অভাবও দূর হয়।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুছাম্মত্ শাকিলা পারভিন বলেন, হাওরের মানুষ মূলত মৌসুমী বেকার।
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা