বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন শাখার পরিচালক পদ ছাড়াও উপাচার্য (ভিসি) তাঁর নিকটতমদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও জ্যেষ্ঠতা ভেঙে সিন্ডিকেট সদস্য করেছেন। এ ছাড়া উপাচার্যের নিজস্ব বলয় তৈরির প্রবণতার কারণে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বঞ্চিত হয়েছেন। এত দিন তাঁরা প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদগুলোতে পূর্ণকালীন নিয়োগ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব কিংবা চলতি দায়িত্ব প্রদানে নিরুৎসাহিত করে ইউজিসি। সাবেক ভিসি ইমামুল হকও ২০১৯ সালে পরিচালক পদে হুমায়ুন কবীরসহ তিনজনকে দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তবে ইউজিসির অনুমোদন না থাকায় তা বাতিল হয়ে যায়। রেজিস্ট্রার পদেও এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সে সময়।
পরিচালকের চলতি দায়িত্ব পাওয়া হুমায়ুন কবীর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছিলেন।২০১২ সালের ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন। এরপর উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব), উপপরিচালক, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং সবশেষ পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, ‘এই প্রথম উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। কিন্তু এ জন্য ইউজিসির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আমি হুমায়ুনের দুই বছরের সিনিয়র। তাঁকে দায়িত্বে বসানোর মাধ্যমে এক ধরনের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
উপপ্রধান প্রকৌশলী ও বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মুর্শিদ আবেদিন বলেন, হুমায়ুন কবিরকে যেভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটা যৌক্তিক নয়, বরং নিয়মবহির্ভূত।
এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিচালক পদে মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন না থাকলেও কেন দায়িত্ব দিল, তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেন। আমাকে তো প্রশ্ন করতে পারেন না। আমার বক্তব্য আমি দেব না।’
এদিকে গত ৩০ মার্চ রেজিস্ট্রার পদে আইন বিভাগের শিক্ষক সুপ্রভাত হালদারকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে এ দায়িত্বে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। নৈতিক স্খলনের অভিযোগে তাঁকে ২০১৯ সালে বরখাস্ত করা হয়। মনিরুল বলেন, এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আপিল বিভাগ ৯ জুলাই তাঁর পক্ষে রায় দিলে যোগদানের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদেশ অমান্য করেছে। এরপর তিনি উপাচার্যকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
সূত্র জানায়, জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী ডিনদের সম্মানজনক স্থানে রাখতে গত ১৮ জুন ভিসিকে চিঠি দেন চারজন ডিন। এরপরই গত ২২ জুন ওই চারজনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ আইন অনুষদের ডিন সুপ্রভাত হালদারকে সিন্ডিকেটের সদস্য করেন ভিসি। এর আগে গত বছর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে একটি কলেজের অধ্যক্ষকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন উপাচার্য।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের পদে দায়িত্ব প্রদানকে আমরা নিরুৎসাহিত করি। বিশেষ করে রেজিস্ট্রার, পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের ক্ষেত্রে পূর্ণ নিয়োগ দিতে হবে।ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া কোনো পদে কাউকে দায়িত্ব দিলে আমরা অর্থ দেব না।’
এ বিষয়ে জানতে ১৯ জুলাই প্রথম দফায় উপাচার্য সাদেকুল আরেফিনকে কল হলে তিনি ক্লাসে আছেন বলে জানান। এরপর কথা বলতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার পর মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বদরুজ্জামান ভুইয়া কাঞ্চন বলেন, পরিচালক পদে দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ভিসি এ বিষয়ে আলোচনাও করেননি। শুনেছেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক