September 8, 2024
আন্তর্জাতিক

ফ্রান্স-ইতালি সীমান্তে ট্রেনে ট্রেনে তল্লাশি

ফ্রান্স-ইতালি সীমান্তে চলছে ট্রেনে ট্রেনে তল্লাশি। পাশাপাশি ফরাসি কর্তৃপক্ষ সীমান্তে বাড়িয়েছে পুলিশি টহল ও নজরদারি ক্যামেরার উপস্থিতি। লাম্পেদুসায় আসা অভিবাসীদের ফ্রান্সে প্রবেশ ঠেকাতে ফরাসি শহর মন্তোর নিকটবর্তী অঞ্চলের সামরিকীকরণ হচ্ছে। অভিবাসীরা তাদের এসব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন অভিবাসীবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টসকে।

ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতালির ভেন্টিমিগ্লিয়া থেকে ফ্রান্সের মন্তো শহরে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দিনে অন্তত একশজনের ক্ষেত্রে ফেরত পাঠানোর আদেশ জারি করা হচ্ছে। এসব অভিবাসীদের আবার ইতালির দিকে ফেরত পাঠানো হয়।

ফ্রান্সে স্বাভাবিক নিয়মে স্টেশনগুলোতে ট্রেন থামে এক থেকে দুই মিনিটের জন্য। কিন্তু ইতালি সীমান্ত পেরিয়ে মন্তো-গারাভান স্টেশনে আসা ট্রেনগুলো থামে অন্তত তিন থেকে চার মিনিটের জন্য। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা রয়েছে নয় জন পুলিশ সদস্য। ট্রেন থামার সাথে সাথে লাউডস্পিকারে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, এই ট্রেনে পুলিশি তল্লাশির অংশ হিসাবে আমরা আপনাদের পরিচয়পত্র দেখাতে অনুরোধ করছি।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা তার সহকর্মীদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন, তারা (অনিয়মিত অভিবাসীরা) কোথায়। অপর ব্যক্তি উত্তর দেন, ‘তারা’ (অনিয়মিত অভিবাসীরা) শেষ বগিতে আছেন। এই দুই কর্মকর্তা আলাপ শেষ না হতেই পাঁচজন পুলিশ সদস্য তাড়াহুড়ো করে প্রবেশ করেন। তারা আবার ফিরে গিয়ে পিঠে পাতলা ব্যাগ বহনকারী দুই যুবককে আটক করে নিয়ে আসেন।

পুলিশ সদস্যরা তাদের বলতে থাকেন, আসুন, বসুন। আমরা আপনাদের ব্যাগগুলো খুলে চেক করব। আপনি বুঝতে পেরেছেন? আসুন, ব্যাগ খুলুন। আপনার নাম কী?

এই স্টেশনে যতবার ট্রেন থামে প্রতিবারই একই কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ। তারা ট্রেনের ভেতর ঢুকে যাত্রীদের মুখগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং সন্দেহজনক লোকদের নামিয়ে আনেন। তবে শ্বেতাঙ্গদের সন্দেহের বাইরে রাখা হয়। যেসব যাত্রীর চেহারায় ক্লান্তির ছাপ তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

অবশেষে স্টেশন ত্যাগ করে ট্রেন। পুলিশের হাতে আটক হওয়া দুই ব্যক্তি প্ল্যাটফর্মে বসে পুলিশকে তাদের তথ্য দেন। তারা দুজনই মরক্কো থেকে এসেছেন। সকালে ট্রেনযোগে ইতালি থেকে ফ্রান্সে ঢুকতে গিয়ে এই স্টেশনে আটক হয়েছেন তারা। তাদেরকে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়ে আবার ভেন্টিমিগ্লিয়ার দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

আইন অনুযায়ী সীমান্ত এলাকার ২০ কিলোমিটারের মধ্যে আটক প্রাপ্তবয়স্ক অনিয়মিত অভিবাসীদের পুনরায় ইতালিতে ফিরিয়ে দিতে পারে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এর একটি দল প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ইতালি এবং ফরাসি থানাগুলোর কাছে অপেক্ষা করেন। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে আটককৃত অভিবাসীদের প্রথমত মন্তো শহরের সীমান্ত চৌকিতে আনা হয়। এই সীমান্ত চৌকিতে প্রথম যারা বেরিয়ে আসেন তাদের মধ্যে দুজন অল্পবয়সী তরুণ।

তাদের একজন ইব্রাহিম বলেন, প্রথমবার আমরা সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি জানতাম না এখানকার পরিস্থিতি এমন।

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু কিছু না বলে চুপ করে আছেন। তিনি নিবিড়ভাবে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন। পুলিশ স্টেশন থেকে এবার বেরিয়ে আসলেন একজন বয়স্ক লোক। তার হাতে তিনটি ব্যাগ, যার একটিতে কম্বল রয়েছে। ৪৯ বছর বয়সি আলি (ছদ্মনাম) বলেন, তিনি স্পেনে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিবার ও চার সন্তানকে মরক্কোতে রেখে এসেছেন।

তিনি টিউনিশিয়ার স্ফ্যাক্স থেকে সমুদ্রপথে ইতালিতে এসেছিলেন। তিনি জানান, পাচারকারীরা আমাদের একটি ছোট মোটর দিয়েছিল কিন্তু এক পর্যায়ে নৌকাটি ভেঙ্গে গেলে আমাদের ২৪ ঘন্টা লেগে যায় নৌকা থেকে পানি বের করতে। কারণ আমি সাঁতার জানতাম না।

আলি বলেন, গত রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফরাসি পুলিশ আমাকে ট্রেন থেকে নামাতে বাধ্য করেছে। তারা বর্ণবাদী মন্তব্য করেছে। আমি তাদের একজনকে বলতে শুনেছি আমি একজন ক্রীতদাস।

কথা বলতে বলতে তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। আলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আমি জানি না কেন তারা আমাদের এত ঘন্টা ধরে আটকে রেখেছিল। আমরা সবাই মেঝেতে শুয়েছিলাম। সেখানে কেউ কেউ ধূমপান করছিলেন। যদিও আমি ধোঁয়া একদম সহ্য করতে পারি না।”

ইতালিতে কর্মরত এমএসএফ -এর অ্যাডভোকেসি অফিসার সিসিলিয়া মোমি বলেন, অভিবাসীদের আটকে রাখার কক্ষটিতে কোন বিছানা নেই। শীতে কোন হিটারের ব্যবস্থা নেই। এছাড়া পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নোংরা।

ফরাসি বর্ডার পুলিশ (পিএএফ) এর বিভাগীয় পরিচালক সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করেন। স্থানীয় অভিবাসন সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফরাসি কর্তৃপক্ষে প্রতিদিন মন্তো অঞ্চল থেকে ৫০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে প্রত্যাখ্যান নোটিশ জারি করা করে।

এমএসএফ এর সেসিলা মোমি বলেন, এই শীত থেকে মে মাস পর্যন্ত পুশব্যাকের হার ছিল ৫০ থেকে ৮০ জন। তারপর থেকে, এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১২০।

শেয়ার করুন: