June 8, 2025
খেলাধুলা

ফুটবলার বুলবুল বিসিবি সভাপতি, উচ্ছ্বসিত সাবেক ফুটবলাররা

আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে। ১৯৯৯ সালে তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে। পরের বছর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। খেলা ছাড়ার পর বুলবুলের পরিচয় হয়েছে ক্রিকেট উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসির হয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বুলবুলের হাত ধরে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয়েছে। অথচ সেই বুলবুলের ক্রীড়াঙ্গনে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ফুটবলার হিসেবে।

রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় বুলবুলের বেড়ে উঠা। আশির দশকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলার। আর সেই সময় গেন্ডারিয়াতে গেন্ডারিয়া ফেমাস, ইস্ট এন্ড ক্লাব ঘরোয়া ফুটবলে বেশ সমাদৃত। অন্য দশ জনের মতো বুলবুলের শৈশব কেটেছে ফুটবলে। এলাকার দল গেন্ডারিয়া ফেমাস, ইস্ট এন্ড হয়ে পরবর্তীতে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ খেলেছেন।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মামুন বাবুর বেড়ে উঠা গেন্ডারিয়াতেই। তাই বুলবুলকে একেবারে ছোটবেলা থেকেই তার চেনা। ফুটবলার বুলবুল নিয়ে মামুন বাবুর মন্তব্য, ‘এলাকায় বুলবুল আমাদের পরের ব্যাচ। বেশ ভালো ফুটবলারই ছিল সে। বিশেষ করে গোল করার অ্যাবিলিটি দারুণ ছিল।’

ক্রীড়াবিদ বুলবুলের মতো মানুষ বুলবুলকেও বেশ সমীহ মামুন বাবুর, ‘বুলবুল আমার খুব কাছের ছোট ভাই। আমাদের বাসা একেবারে কাছাকাছি ছিল। সে যদি ফুটবলেই থাকত তাহলে ফুটবলার হিসেবেও অনেক বড় হতে পারত। ক্রিকেটের পেছনে তার অনেক সাধনা ছিল। ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। খেলোয়াড় বুলবুলের মতোই মানুষ বুলবুল অসাধারণ। এক সময়ের ফুটবলার এখন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বিষয়টি ফুটবলারদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চের।’

আমিনুল ইসলাম বুলবুল ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে যাওয়ার পেছনের কারণ ইনজুরি। ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডানের মধ্যকার ম্যাচে বুলবুল ব্যথা পান। এরপর আর ফুটবলে ফেরা হয়নি। ক্রিকেটের পথ বেছে নেন। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক তিন যুগ আগের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘আমি মোহামেডানের হয়ে খেলছিলাম বুলবুল ভিক্টোরিয়ার। আমার এক ট্যাকেলে সে আঘাত পায়। ঐ আঘাত কাটিয়ে আর ফুটবলে ফিরেনি ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছিল।’

বুলবুল ফুটবল ছাড়লেও ফুটবলারদের সঙ্গ ছাড়েননি। গত এক যুগে যখনই বিদেশ থেকে দেশে বেড়াতে এসেছেন। জাতীয় স্টেডিয়ামে এক পা দিয়েছেনই। বিদেশে থাকলেও তার সম-সাময়িক ফুটবলারদের সঙ্গে থাকত নিয়মিত যোগাযোগ। সাবেক তারকা ফুটবলার ও বাফুফে নির্বাহী সদস্য গোলাম গাউস বুলবুল সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সময়ে ফুটবলার-ক্রিকেটার ও হকি খেলোয়াড়দের মধ্যে অত্যন্ত দারুণ সম্পর্ক ছিল। আমরা একেকজন একেক খেলার একেক ক্লাবের হয়ে একে অন্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। আমাদের মধ্যে এখনো সেই সম্পর্ক রয়েছে।’

ফুটবলার থেকে পুরোদস্তুর ক্রিকেটার হওয়ার পর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ক্যারিয়ারের বড় সময় কেটেছে ঢাকা মোহামেডানে। তাই মোহামেডানের ফুটবলারদের সঙ্গে বুলবুলের সখ্যতা ও আন্তরিকতা আরেকটু বেশিই। মোহামেডানের সাবেক তারকা গোলরক্ষক ও বাফুফে সদস্য ছাইদ হাসান কানন বলেন, ‘মোহামেডানের স্বর্ণালী সময়ে আমরা ফুটবল আর বুলবুলরা ক্রিকেট খেলেছে। ফুটবল ছাড়লেও বুলবুল মোহামেডানের অনেক খেলা দেখতে স্টেডিয়াম গেছে। বিশেষ করে ক্লাবের সিনিয়র ফুটবলারদের প্রতি তার ছিল অন্য রকম ভালোবাসা। এজন্য আমাদের বাড়তি স্নেহও তার প্রতি সব সময়।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ ব্যক্তি এক সময় ফুটবলার ছিলেন। যেনতেন পর্যায়ের নয় একেবারে সেই সময় শীর্ষ স্তরেই খেলেছেন। সাবেক ফুটবলার বিসিবি সভাপতি হওয়ায় ফুটবলাঙ্গনে বাড়তি আনন্দ। সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীতের পক্ষ থেকে বুলবুলকে সম্মাননা জানানোর পরিকল্পনা করছে।

শেয়ার করুন: