ফারুকীর বাবার কাছে শোনা গল্প কি মিলে যাচ্ছে
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল। এখন চারপাশ থেকে যেসব ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে, ভেসে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সেসব ভীতিকর। এসব ঘটনা বাবার কাছ থেকে শোনা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী গল্পের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, জানালেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দেশ। স্বৈরাচার আমলজুড়ে চেপে রাখা রাগ-ক্ষোভ উদগীরণ করছে কতিপয় মানুষ। এমনকি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে ‘মব জাস্টিস’ বা ‘উন্মত্ত জনতার বিচার’। শুরু থেকেই এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন সচেতন মানুষেরা। সম্প্রতি এ নিয়ে সরব হলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ক’দিন আগেও তিনি এ রকম এক ঘটনা থামানোর আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘মবরাজ থামান। শৃঙ্খলা আনেন।’
কিন্তু কোনো কারণেই থামানো যাচ্ছে না বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড! সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সামনে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় ফারুকীর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা কি তাদের একটু স্বস্তি দিতে পারি না?’
আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে ফারুকী লিখেছেন, ‘তুমি যদি স্বাধীনতার মর্ম না বোঝো, তাহলে তুমি স্বাধীনতার স্বাদ হারাবে। আব্বার কাছে শুনতাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকের মধ্যেই জোশ চলে আসছিল যে, সে-ই সব। সে নিজেই অভিযোগকারী, নিজেই বিচারক, নিজেই এক্সিকিউশনার। হাতে অস্ত্র আছে, অথবা আছে মবের শক্তি। সুতরাং মার, মেরে ফেল। ফল কী হয়েছিল আমরা জানি।’
বিগত সময়ে ঘটা এমন কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আচ্ছা, স্বাধীনতার পর না হয় একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল, এমনকি যখন আওয়ামী লীগের কঠিন আঁটুনির ভেতর আটকা ছিল দেশ, তখনও কি আমরা বাড্ডার এক মাকে ছেলেধরা সন্দেহে মারি নাই? রংপুরে নামাজের পর এক মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে মেরে পুড়িয়ে দেই নাই?’
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরের প্রত্যাশা নিয়ে এই নির্মাতা লেখেন, ‘আমি আশা করছিলাম, এই নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথে নতুন দায়িত্বের ব্যাপারটা আমার উপলব্ধি করব। আমাদের দিলে রহম জিনিসটা আসবে। একশ’ জন মববাজি করতে আসলে দুইজন হলেও রুখে দাঁড়াবে! ঢাকা আর জাহাঙ্গীরনগরে কি এ রকম চারজন ছাত্র ছিল না রুখে দাঁড়ানোর? এটা লজ্জার, বেদনার।’ সবাইকে দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘সবাই দায়িত্ব নিই চলেন। মববাজি বন্ধ করেন। ফ্যাসিবাদিদের ফাও আলোচনার বিষয় উপহার দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, প্লিজ। আলোচনাটা থাকতে দেন রিফর্মে, ফ্যাসিবাদের বিচারে।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ মুক্তি পায় গত বছর। তাতে প্রথমবারের মতো অভিনয়ও করেন তিনি। ২০১৬ সালের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার বানানো সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেশে সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সনি লিভ নামের একটি বিদেশি ওটিটিতে মুক্তি পায় ছবিটি, যা এ দেশের মানুষের দেখার সুযোগ ছিল না। তবে শিগগিরই দেশে সিনেমাটি মুক্তি পেতে পারে বলে জানা গেছে।