November 23, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

প্রিয় সন্তান আর ফিরে আসবে না, মানতেই পারছেন না হৃদয়ের মা

বুধবার ভোর থেকে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছিলেন নিপা আক্তার। এটা তাঁর সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময়। নিপা মানতেই পারছেন না, তার প্রিয় সন্তান আর ফিরে আসবে না। তাকে নিয়ে আর কখনো স্কুলে যাওয়া হবে না। কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে খুঁজতে কখনো যাচ্ছিলেন তার কক্ষে, কখনো যাচ্ছিলেন খাবার ঘরের দিকে। নিপার এমন পাগলপ্রায় আচরণ দেখে স্বজনেরাও শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।

শরীয়তপুর জেলা শহরের শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় খান ওরফে নিবিড়ের (১১) মা নিপা আক্তার। মুক্তিপণের দাবিতে গত সোমবার সন্ধ্যায় হৃদয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হৃদয়ের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না পরিবার, স্বজন, গ্রামের মানুষ, সহপাঠী ও শিক্ষকেরা।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার মালয়েশিয়াপ্রবাসী মনির খানের ছেলে হৃদয় খান। আজ ভোরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হৃদয়ের মা নিপা আক্তার, দাদা মোমিন আলী খান, দাদি অমেলা বেগম, চাচা জাকির হোসেন খান বাড়ির উঠানে বসে কাঁদছিলেন। আত্মীয়-স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

দাদি অমেলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তাঁর নাতিদের মধ্যে বড় ছিল হৃদয়। সে সবার চোখের মণি ছিল। ছয় বছর ধরে হৃদয়ের মা নিয়ম করে সকালে তাকে স্কুলে নিয়ে যেত। ছেলেকে ঘুম থেকে তোলা, স্কুলের জন্য প্রস্তুত করা, খাবার তৈরি করে খাওয়ানো—সব একাই সামলাতো তার মা। কিন্তু হঠাৎ করে ছেলেকে হারিয়ে মা দিশাহারা। সব কক্ষে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

পালং মডেল থানা সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে মা নিপা আক্তারের সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়িতে ফেরে হৃদয়। দুপুরের খাবার খেয়ে সে বাড়িতে খেলছিল। বিকেলের দিকে দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণ করে। সন্ধ্যার দিকে নিপা আক্তারের মুঠোফোনে ফোন করে ছেলেকে অপহরণের কথা জানায় দুর্বৃত্তরা। তখন তাকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

নিপা আক্তার ঘটনাটি তাঁর স্বজনদের জানান। তাঁরা পালং মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ ওই মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে সোমবার রাতে তাঁদের বাসার ভাড়াটিয়া সিয়ামকে (২০) আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় শাকিল গাজি (১৮), ১৫ বছরের এক কিশোর ও শাওন চৌকিদারকে (২০)। তাঁদের মধ্যে সিয়ামের বাড়ি পাবনার সিংড়া এলাকায়। বাকি তিনজন স্থানীয় খিলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ বাড়ির পাশের একটি ইটভাটার পাশের বাগানে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করে। গতকাল দুপুরে ওই শিশুর দাদার করা মামলায় আটক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আসামিদের বরাত দিয়ে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দেন শরীয়তপুর পুলিশ সুপার মাহাবুবুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হৃদয়দের বাসার ভাড়াটিয়া সিয়াম ৩-৪ দিন আগে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। তিনি এ বিষয়ে তুহিন, শাওন ও শাকিলের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সোমবার বিকেলে হৃদয় যখন বাড়ির পাশে খেলছিল, তখন তাকে কৌশলে বাড়ির পাশের একটি ইটভাটার নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর হৃদয়ের সন্দেহ হয়। তখন সে চিৎকার করার চেষ্টা করলে অপহরণকারীরা তার মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

আজ সকালে কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন চাচা জাকির হোসেন। সিয়াম হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর ঠান্ডা মাথায় সবার সঙ্গে মিলে হৃদয়কে খোঁজাখুঁজি করেন। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

শরীয়তপুর সংবাদদাতা

শেয়ার করুন: