January 29, 2025
লেটেস্টসম্পাদকীয়

প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব কবে বুঝবো আমরা?

ইউনেস্কোর পরামর্শ, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা উচিত, আমাদের দেশে বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় ১ দশমিক ৭৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৩-২৪ সালের উন্নয়ন বাজেট মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১১ শতাংশ, যা ২০২২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। অর্থাৎ শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ যে বলছেন, নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা, সেটা মোটেও অতিশয়ক্তি নয়। ১০ জুন, ২০২৩ গাইবান্ধা জেলা শহরের জলধারা সভা কক্ষে সিপিডি ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিস্থিতি: আমাদের করণীয়’ বিষয়ে একটি সংলাপ আয়োজন করে। সংলাপে বক্তারা বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে তা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শুরু করতে হবে। সরকার যে পরিমাণ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়, তা যথেষ্ট নয়। সম্পদের অভাব সত্বেও শিক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব।

জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের মোট বরাদ্দের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। কিন্তু সচেতনভাবেই প্রাথমিক শিক্ষা খাতটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যেখানে সবচেয়ে উচ্চমানের শিক্ষক প্রয়োজন সেখানে আসেন কোথাও যিনি সফল নন, এমন কেউ। অনেক শিক্ষকের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত হলেও তিনি যথেষ্ট মটিভেটেড থাকেন না শিক্ষকতায়। এমনও অনেক সময় দেখা গেছে, পড়ানোর বাইরে অন্য কোনে লাভজনক বৃত্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  একটি সূত্র হতে জানা গেছে, যে বছর ৯৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক সমাপনীতে উন্নীত হলো, সেই বছরও গণিত ও ইংরেজিতে তেমন ভাল করতে পারেনি অনেক শিশু। এর প্রভাব ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঠেকছে।

শিক্ষার দর্শন নিয়েও ঝামেলা আছে। পড়ালেখা আনন্দদায়ক না হয়ে, সেটা বোঝা হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীর কাছে। কোনো শিক্ষার্থী প্রানান্ত পরিশ্রম করছে, কিন্তু তার কাঙ্খিত ফল লাভ হচ্ছে না। এমনভাবে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থী মুখস্ত বিদ্যার উপর ঝুঁকে পড়ছে। দেওয়া হলো সৃজনশীল একটি পদ্ধতি কিন্তু সেটা কিভাবে প্রয়োগ হবে, তার থেকে ভালটা কিভাবে বের করে আনা হবে সেটা নিয়ে দারুণ বিভ্রান্তি দেখা গেল। অভিভাবকদের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে খুববেশী যে অবহিতি আছে তেমনটা বলা যাবে না। মোটকথা, গোটা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাটা যেখানে আনন্দ পাওয়ার উপাদান হবে, সেখানে সেটা সীমিত থেকে যাচ্ছে কোনোভাবে উৎরে যাওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে। শিক্ষার্থীর মধ্যে বড় স্বপ্ন যেমন তৈরি হচ্ছে না তেমনি তার স্বপ্নের পেছনে ছোটার বিষয়টাও অধরা থেকে যাচ্ছে। কতটা দেশপ্রেম, কতটা নৈতিক মান শিক্ষার্থীর মধ্যে শেকড় গাড়ছে, ক্রমাগত তার অ্যাসেসমেন্ট হওয়া উচিত। ফলাফল সন্তোষজনক না হলে সেটা কিভাবে অর্জিত হবে, তার দিকনির্দেশনা নিয়ে ব্রেইন স্টর্মিং হতে পারে। কিন্তু সার্বিক চিত্রটা এতটাই উদ্বেগজনক, তা থেকে একটা বিষয় খুব পরিস্কার। আমরা প্রাথমিক শিক্ষার ‍গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে আমরা পিছনে পড়ে থাকছি। এজন্য সঙ্গত কারণে আমরা এই প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইছি: প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব কবে বুঝবো আমরা?

 

শেয়ার করুন: