April 30, 2025
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে খুন, যা আছে মামলার এজাহারে

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিবাদের জেরে ‘ছুরিকাঘাতে’ জাহিদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ফুপাতো ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। তারাও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানা গেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন নিহতের ফুপাতো ভাই হুমায়ুন কবির।

তিনি মামলার এজাহারে যা উল্লেখ করেছেন তা হলো-

ঘটনার দিন তৃতীয় বর্ষের মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে যায় নিহত জাহিদুল। পরীক্ষা শেষে বিকেলে তারা নিহতের বন্ধু প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ৩য় বর্ষের তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ আরও অনেকে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অপজিটে র‍্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনে আলামিনের পুরি-সিংগারার দোকানে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন এবং হাসাহাসি করছিলেন। ওই সময় জাহিদুল ও তার বন্ধুদের পেছনে ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস এর দুইজন ছাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় তাদের হাসাহাসিতে তাদের কাছে আসে এবং হাসির কারণ জানতে চায় তিন ‍যুবক মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০)। এরপর নিহতের সাথে শুরু হয় মামলার বাদীর ভাই এবং তার বন্ধুদের তর্কবিতর্ক। বিষয়টি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের লেকচারার শুষমা ছোঁয়াতী এবং সাইকোলজি বিভাগের আবুল হাশেম স্যারের নজরে আসলে তারা উভয় পক্ষকে ডেকে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অফিসে শুষমা ছোঁয়াতী, আবুল হাশেম, ইংরেজি বিভাগের মশিউর রহমানের মধ্যস্ততায় বিষয়টি মীমাংসা হয়।

জাহিদুল ও তার বন্ধুরাও বের হয়ে ভার্সিটির সামনে রাস্তার ওপর নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার সময় বিকেল চারটার দিকে অজ্ঞাত কিছু যুবক তাদের হাতে ছুরি-চাকু ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আসে। তারা জাহিদুল ও তার বন্ধুসহ অন্যদের প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির সামনে পাকা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ধাওয়া করে। জাহিদুলসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা দৌড়ে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির মধ্যে প্রবেশকালে তারা জাহিদুল এবং তার বন্ধু তরিকুল ইসলামকে ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে ধরে ফেলে। এরপর তারা জাহিদুলকে এবং তার বন্ধু তরিকুলকে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকেন। একপর্যায়ে জাহিদুলের হাত আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস, মাহাথির হাসান শক্ত করে ধরে রাখে।

পরে মেহেরাজ ইসলাম তার হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বুকের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে। এতে জাহিদুলের বুকের বাম পাশে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এরপর হামলাকারীরা তাকে মারতে থাকেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা পালিয়ে যায়। এছাড়াও মেহেরাজ ইসলাম ও ফাহিমসহ অন্যরা মিলে জাহিদুলের বন্ধু তরিকুল ইসলামকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি আঘাত করে মাথার মাঝখানে এবং বাম হাতের কুনুইয়ের নিচে কাটা রক্তাক্ত গুরুতর জখম করে। আর সেই সময়ে এই দৃশ্য দেখতে পান ইউনিভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষিকা শুষমা ছোঁয়াতী, শিক্ষক আবুল হাশেম, ইংরেজি বিভাগের মশিউর রহমানসহ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির গেটে থাকা সিকিউরিটি মাহামুদুল হাসান, সোয়েব, মনিরসহ উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

এসময় নিহতের বন্ধুরা ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে তারা তাদের হুমকি দিয়ে বলে-আমাদের যা করার তা আমরা করেছি, তোরা যা পারিস করিস। এরপর হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা শুসমা ছোঁয়াতী ও টেক্সটাইল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদসহ আরও অনেকে পারভেজকে এবং তার বন্ধু তরিকুল ইসলামকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় সিএনজি যোগে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জাহিদুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই খবর নিহতের বন্ধু নয়ন ও আবির বিষয়টি মোবাইল ফোনে মামলার বাদীকে জানালে তিনি ঢাকায় আসেন। এ ঘটনার পর প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা শুসমা ছোঁয়াতী, আবুল হাশেম, ইংরেজি বিভাগের মশিউর রহমান, শিক্ষার্থী নয়ন, আবির, শান্তসহ আরো অনেকের নিকট ঘটনার বিস্তারিত শুনে এবং তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে আলোচনা করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

এ ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একেএম মইন উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা আসামিদের ধরার চেষ্টা করছি।

নিহত শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র। ২৩ বছর বয়সী এ শিক্ষার্থীর বাড়ি ময়মনসিংহে।

থানা সূত্র জানায়, শনিবার বিকেল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ নিহত হন।

শেয়ার করুন: