প্রশাসন রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রাণশক্তি : ফারুক-ই-আজম
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, রাজনীতিবিদরা যেভাবে নীতি ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনার আলোকে কাজ করেন। প্রশাসন বা সিভিল সার্ভিসই হলো রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রাণশক্তি। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি, প্রকৃত পেশাদারিত্ব অর্জন করি, তবে দেশ পরিচালনা আরও কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও জনগণমুখী হবে। আমলাতন্ত্র, রাজনীতি ও নাগরিক সমাজ সবাই মিলে একটি ন্যায্য, সুশাসিত ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম চেম্বারের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত আমলাতন্ত্রের পেশাদারিত্ব : চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন- চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ড. মো. জিয়াউদ্দীন। সেমিনারে মুখ্য বিশ্লেষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, যে কোনো বিষয়ের গভীরে যেতে হলে তার উৎপত্তি বিশ্লেষণ করা জরুরি।
তিনি যোগ করেন, যদি আমরা প্রকৃত অর্থে পেশাদারিত্ব অর্জন করতে পারি, তাহলে দুর্নীতি স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পাবে। দায়িত্ব পালনকালে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা পেশাদারিত্বের মান ক্ষুণ্ন করে। এর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব, দক্ষতার ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং আমলাতান্ত্রিক জড়তা অন্যতম। এই বাধাগুলো অতিক্রম না করলে পেশাদারিত্বের আদর্শ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের পেশাদারিত্ব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কেবল পদ বা অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর না করে, পারফরম্যান্স বা কর্মফলভিত্তিক মূল্যায়ন প্রবর্তন করতে হবে। এতে প্রকৃত যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি নিশ্চিত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনের স্রোত বইতে শুরু করেছে, তা দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত। এখন দেশের প্রতিটি মানুষ, বিশেষ করে প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই, নতুন করে দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা অনুভব করছেন- এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা। উত্তরণের পথ নিয়ে তিনি বলেন, পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য মেধাভিত্তিক নিয়োগ, সঠিক প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, পারফরম্যান্স ব্যবস্থাপনা, নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা সিভিল সার্ভেন্ট, আমরা সবাই আইনের শাসন ও নিয়মের কাঠামোর মধ্যে থেকেই কাজ করতে চাই। কিছু বিচ্ছিন্ন উদাহরণ বাদ দিলে, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা সততা, দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কার্যকারিতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা ও সহায়তা থাকলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারব, জনগণের কল্যাণে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবো।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরাফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।
এ ছাড়া সারাদেশ থেকে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

