প্রফুল্ল চেহারা কেন হয়ে যায় বিবর্ণ?
দিলরুবা ইয়াসমিন কলি
একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে নির্মল হৃদয় নিয়ে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জগতের নিয়ম-কানুনগুলো অন্তরে ধারণ করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার অন্তর থাকে নির্মল এবং চেহারা থাকে প্রফুল্ল।
বড় হওয়ার সাথে সাথে তার আপনজনেরা মঙ্গল কামনায় নিজ নিজ সীমাবদ্ধ ধারণাগুলো ধরিয়ে দেয়। জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না দিয়ে প্রতিনিয়ত সাফল্যের পিছনে দৌড়াতে বলে এবং স্রষ্টাকে জেনে বুঝে ভালোবাসা না শিখিয়ে স্রষ্টার ভয় অন্তরে স্থাপন করে।
ফলে জীবনকে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দেখতে সক্ষম হয় না। বিবেক বুদ্ধি বিকশিত হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় সংকীর্ণ বিশ্বাসের শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে রক্তমাংসের রোবটে পরিণত হয়।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরমোনের চাপে তৈরি হয় ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের ইচ্ছা। আর এই ইচ্ছা থেকেও নিজেই নিজের জালে আটকা পড়ে।
একদিকে প্রতিনিয়ত সাফল্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় মানসিক অস্থিরতা কখনো বা আশাকৃত চাকরি বা ব্যবসা করেও একঘেয়েমি জীবনে কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি! অন্যদিকে ভোগবাসনা পূরণ করেও কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি!
জীবনের এই চলার পথে চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে গিয়ে আশপাশের মানুষের সাথে ঘটে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিবাদ। ঘটে জীবনের ছন্দপতন। ভিন্ন পথে ভিন্ন গতিতে জীবন জীবনের মত বয়েই চলে। কিন্তু মনের স্বস্তি মেলেনা। সব সমস্যার মূলে এসে দাঁড়ায় অনিয়ন্ত্রিত মন।
মন যতই শৃংখলে বাঁধা পড়ে ততই অস্থির হয়ে ছুটে বেড়ায় নতুন সুখময় বিষয়ের সন্ধানে। নিজের মনোদৈহিক চাহিদার ধারণা ও সমাজ থেকে পাওয়া সীমাবদ্ধ ধারণার কারাগারে আবদ্ধ হয়ে দহন যন্ত্রণায় কেবল নিঃশেষ হয়।
আদৌ কি জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব? আদৌ কি মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? মনে এমন প্রশ্ন তৈরি হলেই তো সে উত্তরের সন্ধান করবে। উত্তর পাওয়া শুরু হলেই তার ঘোর কাটবে। ঘোর কেটে গেলেই স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাবে সে কতটা ভয়াবহ কারাগারে আবদ্ধ হয়ে নিজের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল। আর সেই বিষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের পরিবেশে ও দেহের প্রতিটি কোষে। শোকের বিষে পরিপূর্ণ দেহ তরীতে বাসা বাঁধে রোগে।
কারাগারের মধ্যে কারাগারে, অজ্ঞতার মধ্যে অজ্ঞতার অন্ধকারে সেই নিষ্পাপ শিশুর প্রফুল্ল চেহারা বিষন্নতার কালো ছায়ায় বিপর্যস্ত হয়।