পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও বহু রোগের ঔষধ চুইঝাল: প্রাপ্তি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি মসলার নাম চুইঝাল। রন্ধনশিল্পীদের কাছে চুইঝাল খুব জনপ্রিয় একটি রন্ধন উপাদান। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে রান্নার স্বাদতো আনেই, পাশাপাশি চুইঝালের রয়েছে অনেকগুলো ঔষধি উপাদান। যেমন সিলেটের বিখ্যাত চুইঝালের মাংসের সুনাম এখন অঞ্চলভেদে সব জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছে। তবে পাহাড়ী অর্থাৎ সিলেট এলাকার চুই ঝালের খুলনা অঞ্চলের চুই ঝাল অনেক বেশী স্বাদ ও গন্ধের।
চুইঝাল গাছ সম্পর্কে কিছু তথ্য:- চুই ঝাল বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে – piper chaba । এটি পিপারাসি পরিবারের সপুষ্পক লতানো উদ্ভিদ। পান ও চুই ঝাল একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। চুই ঝালের গাছ দেখতে অনেকটা পানের গাছের মতন লতানো তবে পাতাগুলো কিছুটা অন্যরকম হয় যথা লম্বা ও পুরু। এর পাতায় কোন ঝাল স্বাদ পাওয়া যায় না।
রান্নার জন্যে যেভাবে ব্যবহার করা হয়:- চুইঝাল গাছের কান্ড ও ডাল মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রান্নায় ঝাল স্বাদ আনতে মরিচের পাশাপাশি চুইঝালও ব্যবহার করা হয়। এর ঝাল খাবারের স্বাদ বাড়ায় আবার শরীরেরও কোনো ক্ষতি করে না।
ঝোল জাতীয় রান্নাসহ প্রায় সব কিছুতেই চুইঝাল স্বাদ বৃদ্ধি করে। এ গাছের কাণ্ড বা লতা কেটে ছোট টুকরো করে মাছ-মাংসের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। রান্নার পর এই টুকরো চুষে বা চিবিয়ে খাওয়া হয়। শুধু ঝাল স্বাদের জন্য নয় চুইয়ের রয়েছে নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণ।
চুইঝালে যেসব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে:-
পিপালারটিন – ৫ %
অ্যাকালয়েড-৫%
সুগন্ধি তেল-৫%
পোপিরন-৪%-৫%
এর শিকড়েই পিপারিন রয়েছে -১৩%-১৪%
এছাড়া পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সিজামিন, পিপলাসটেরল ইত্যাদি রয়েছে।
চুইঝালের যেসকল ঔষধি গুণ রয়েছে:-
১. চুইঝাল গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২. খাবারের রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৩. পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী উপাদান।
৪. স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে চুইঝাল।
৫. শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের ব্যথা সারায়।
৬.কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট থেকে উপশম করে।
৭. ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
৮. এক ইঞ্চি পরিমাণ চুই লতার সাথে আদা পিষে খেলে সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চুইঝালের বাণিজ্যিক প্রসারঃ –
চু্ইঝালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পারিবারিক অর্থনৈতিক কাঠামো। একজন কৃষক ৪ টি চু্ইঝাল গাছ থেকে চুইঝাল সংগ্রহ করে তার পরিবারের ভরণপোষণের খরচ চালাতে পারেন। স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি চুইঝালের দাম পরে প্রায় ৭০০-১৫০০ টাকা।
কাঁচা চুইঝাল থেকে শুকনো চুইঝালের দাম প্রায় ২-৩ গুন বেশী হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে বছরে ২০-২৫ কেজি চুইঝাল সংগ্রহ করা যায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চুইঝাল এখন বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে চুইঝালকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতিতে বড় সাফল্য অজর্ন করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চুই ঝাল সংরক্ষণ পদ্ধতি:
চুই ঝালের সংরক্ষণ বিষয়ে যেসব ভিডিও ইউটিউবে দেখা যায় তা অধিকাংশ কাঁচা সংরক্ষণ বিষয়ে নির্মিত। কিন্তু চুই ঝাল রোদে শুকিয়েও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একবারে বেশী পরিমাণ ক্রয় করে কেটে টুকরো টুকরো করে রোদে শুকাতে হবে। তারপর কাটা টুকরোগুলিকে ব্লেন্ডার মেশিনে মশলা গুড় করার মত করে গুড়া করে ফেলতে হবে। মরিচের গুড়ার মত কাঁচের বয়েমে সংরক্ষণ করতে হবে। তরকারি রান্না হয়ে গেলে চুলা হতে নামানোর আগে আগে তাতে পরিমাণ মত চুইঝালের গুড়া ব্যবহার করতে হবে।
কম দামে বেশী চুই ঝালের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে:
গল্লামারী ব্রিজ সংলগ্ন বাজার, খুলনা
সন্ধ্যা বাজার, খুলনা
খামারী ব্রিক্রেতা: সুব্রত ০১৭৪১৭৪৬৪৫৪