September 20, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: তদন্ত কমিশন চায় নিহতদের পরিবার

দেড় দশক আগে ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন চায় নিহতদের পরিবার।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা বিদ্রোহ সংগঠিত হয়।

বিদ্রোহী বিডিআর সৈন্যরা পিলখানায় বিডিআর সদর দফতর দখল করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিককে হত্যা করে।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়; আরও ২৫ জন বিদ্রোহে জড়িত থাকার কারণে তিন থেকে দশ বছরের মধ্যে কারাদণ্ড পেয়েছিল। আদালত অভিযুক্ত ২৭৭ জনকেও খালাস দিয়েছিল।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৭ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনের তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্তের পর ২০২০ সালে তারা যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন সেটি প্রকাশ করা এবং সেই রিপোর্টের ওপর একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত ৫৭ সেনা অফিসার এবং ১৭ জন সিভিলিয়ান পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও এ ঘটনায় যতোগুলো তদন্ত হয়েছে সব তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশেরও দাবি জানান তারা।

শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। সেনাদের পাশাপাশি অন্য যারা নিহত হয়েছেন তাদেরও শহীদ ঘোষণা করা, প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, পাঠ্যসূচিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ট্রাজেডি বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, যেসব বিডিআর জওয়ান এখনো নিরপরাধ হিসেবে কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি নিশ্চিত করা, সেই সময় প্রতিবাদ করার কারণে সেসব অচেনা অফিসার চাকরি হারিয়েছেন তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল অথবা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পিলখানায় নিহত সেনা অফিসার শফিকের ছেলে আইনজীবী সাকিবুর বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন এবং নিহত বিডিআর কেন্দ্রীয় সুবেদারের ছেলে আব্দুল হান্নানসহ নিহত সেনা সদস্যদের ভাই, স্ত্রী, ও সন্তানরা বক্তব্য দেন।

এ সময় নিহত মেজর শাকিলের ছেলে দাবি করেন, এ হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফজলে নুর তাপস ও শেখ সেলিম সরাসরি জড়িত। এছাড়াও নেপথ্যে আরও রয়েছে। তিনি মনে করেন, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হলে তাদেরও নাম আসবে।

এ সময় নিহত সেনা অফিসার লে কর্নেল কুদরত ইলাহি রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিবুর বলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সেই সময় কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন সেটি তিন দফা সংশোধন করার পর মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছিল। এ সময় তিনি সেই রিপোর্টের ‘র’ কপি প্রকাশের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবারের সদস্য ২৫ ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহ না বলে বিডিআর হত্যাকাণ্ড বলার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস এবং শেখ সেলিম এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত। এছাড়াও এ ঘটনায় ডাল-ভাত নিয়ে দ্বন্দ্বের যে কথা প্রচার করা হয় তা সত্য নয়।হত্যাকাণ্ডটিকে ভিন্নখাতে নিতেই এমন কথা প্রচার করা হয়েছিল।

শেয়ার করুন: