পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ৫০ গ্রাম প্লাবিত
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। স্রোতে ভেসে গেছে বেশকিছু বাড়িঘর। এছাড়া নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর বাধ ভেঙে এলাকায় পানি প্রবেশ শুরু করেছে। এতে দুই উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, প্রতিবছর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ এলাকা প্লাবিত হয়। শুক্রবার ভোর থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। এতে ঝিনাইগাতী উপজেলার রামেরকুড়া ও খৈলকুড়া ব্রিজপাড় এলাকায় মহারশি নদীর বাধ ভেঙে পানি প্রবেশ শুরু করে। এতে বেশ কিছু বাড়িঘর পানিতে ভেসে গেছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে মহারশি নদীর অন্তত পাঁচ জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ডুবে গেছে আমন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। এ নিয়ে চলতি বছর দুই দফায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন উপজেলাবাসী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার অন্তত সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি এবং পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। ঢল অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঢলের পানিতে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের নিম্নাঞ্চল, শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মন্ডলিয়াপাড়া ভজপাড়া ও সন্নাসিভিটা, বাতকুচি এলাকায় ভোগাই এবং চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজীরখামার সড়ক।
রাস্তাঘাট ও ব্রিজ কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাড়ি ঘরে পানি উঠায় রান্না করতে পারছেন না এসব এলাকার লোকজন। ফলে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারের ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, ঢলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মহারশি নদীর বাঁধ দুর্বল হওয়ায় সেটি ভেঙে বাজারসহ নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে।
ঝিনাইগাতীর শাহজাহান আলী বলেন, এর আগে এতো পানি দেখি নাই। আমাদের বাড়ি ঘরে পানি। রান্না করতে পারছি না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি।
ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবু বকর বলেন, আমাদের দোকানপাটে পানি ওঠেছে। অনেক ব্যবসায়ীর ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কেউ এদিকে দেখে না।
কৃষক ফজলু মিয়া জানান, আমাদের সব ফসল পানির নিচে। এ ধান এহন খাইয়া গেলেগা আমরা বাচমু কেমনে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে চৌদ্দ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনকবলিত বাধের জায়গা দ্রুত মেরামতে কাজ শুরু হবে। আর বাঁধের স্থায়ী সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুই উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আটকে পড়া মানুষজনদের উদ্ধারে নৌকা নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য শুকনো খাবার রেডি করা হচ্ছে। রাতের মধ্যে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।