পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজধানীতে উৎকণ্ঠা
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আজকের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ এখন সর্বত্র। একই দিন মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে দুই দলের সমাবেশ হওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যদিও দুই দলই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ নাশকতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এই সমাবেশ ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসীদের রাজধানীতে আসার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে। একই সঙ্গে আজকের সমাবেশ ঘিরে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুটি সমাবেশেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ রাত পর্যন্ত পুরো রাজধানী থাকবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্যে।
সরকারপতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি শুক্রবার বেলা ২টা থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করেছে। আর আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ একই দিন বেলা ৩টা থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করছে। দুই দলই সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছে। বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হতে পারে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন তথ্য নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
নিরাপত্তা জোরদারে পোশাকধারীর পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানোর পাশাপাশি ঢাকার প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে মেটাল ডিটেক্টরসহ অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসিয়েছে। পুলিশ বলছে, ঢাকার প্রায় ২ কোটির বেশি জনগণের নিরাপত্তায় প্রস্তুত রয়েছে ডিএমপি। যে কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে যেসব গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, সেই অনুযায়ী মাঠে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ শুরু করেছে। এছাড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ যানজট, নাশকতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলার কৌশলও নিয়েছে পুলিশ। সাইবার স্পেসেও মনিটরিং করবে পুলিশ।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সামনে দুই দলের আরো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ হবে। মাঠে তৎপর হবে তারা। ঐ সময়ও তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য এসেছে। এ কারণে আজ থেকে আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সমাবেশ সম্পর্কে দুই দলকেই ডিএমপির পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে ছুটির দিনগুলো ছাড়া সভা-সমাবেশ না করার জন্য। কারণ সমাবেশের নিরাপত্তা দিতে হয়, আবার অফিস-আদালত খোলা থাকলে সেগুলোর নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। ঐ সময় যানজটে জনগণকে চরম দুর্ভোগও পোহাতে হয়। তাছাড়া দলগুলোকে একই দিন সমাবেশ না করার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।
আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুটি সমাবেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখে নিরাপত্তার বিষয়টি সাজানো হয়েছে।
র্যারে মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, র্যাব সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে তাদের গোয়েন্দা তত্পরতাও। নিরাপত্তায় যাতে কোনো ধরনের বিচ্যুতি না থাকে, সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে র্যাব মাঠে থাকছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক হোসেন বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও তত্পর।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাজধানীতে সমাবেশ করতে হলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই শর্ত মেনে চলার অঙ্গিকার করেছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শর্ত অনুযায়ী রাস্তায় কোনো ঝামেলা করা যাবে না, জনদুর্ভোগ করা যাবে না। যদি তারা আইন মেনে সমাবেশ না করেন, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।