পাকিস্তানের ৪ পেসার সামলানোর চ্যালেঞ্জ টাইগারদের
আগের সরকারের পতন ঘটেছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। দেশও ছেড়েছেন। তার দল আওয়ামী লীগ হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে। চারিদিকে রদবদলের পালা। ক্রিকেট বোর্ডেও পরিবর্তনের ঘণ্টা বাজছে।
বোর্ড সভাপতি পদে পরিবর্তন অনিবার্য। বোর্ড সভাপতি পদে নাজমুল হাসান পাপনের জায়গায় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এই বদলাবদলিটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিগ বস পাল্টে গেলে হয়তো বোর্ডের কাজকর্মেও আসবে পরিবর্তনের ছোঁয়া। অনেক কিছুই বদলে যাবে।
জাতীয় দলে আমূল পরিবর্তন না ঘটুক, টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং-সাপোর্টিং স্টাফে রদবদল ঘটার সম্ভাবনা প্রচুর। খোদ টাইগার হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মাথায়ও সে পরিবর্তনের চিন্তা মাথায় চলে এসেছে। এ লঙ্কানও ধরে নিয়েছেন, বোর্ড পরিচালনায় নতুনরা আসলে তাকে হেড কোচ নাও রাখতে পারে।
তাই তো টেস্ট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, ‘যতদিন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে, আমি দায়িত্ব পালন করতে চাইব। তবে বোর্ড যদি বদলে যায় এবং তারা যদি পরিবর্তন চায়, আমার তাতেও সমস্যা নেই। তারা যদি আমাকে চালিয়ে নিতে বলে, আমাকে নিয়ে খুশি থাকে, আমিও খুশি মনে দায়িত্ব পালন করব।’
মোদ্দা কথা, সব কিছুতে একটা পরিবর্তনের আভাস। আর এই পালাবদলের মধ্যেই আগামীকাল ২১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজ। দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট হবে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে।
করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়াম আর লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের মতো রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম নিয়মিত টেস্ট ভেন্যু নয়। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু এ স্টেডিয়ামের পথ যাত্রা। ৩১ বছরে মাত্র ১৩টি টেস্টই বলে দেয় এ মাঠে টেস্ট নিয়মিত হয় না।
সর্বশেষ টেস্ট হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর। ইংল্যান্ডের কাছে সে টেস্টে ৭৪ রানে হেরেছিল পাকিস্তান। বাংলাদেশ এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে একটি টেস্ট খেলেছে। সে ম্যাচে ইনিংস ও ৪৪ রানে হেরেছিল মুমিনুল হকের দল।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশ ৩ জয় পেলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স একদমই ভালো ছিল না। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত , লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান রান করতে পারেননি। রীতিমত ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন।
হোক তা ভিন্ন ফরম্যাটে, খারাপ খেলতে থেকে আরেক ফরম্যাটে নিজেকে মেলে ধরাও সহজ কাজ নয়। শান্ত, লিটন আর সাকিবের জ্বলে ওঠা রীতিমত বড় চ্যালেঞ্জ।
ওদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে গত বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে হয়নি দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট। ৪ দিনের ম্যাচের চর্চা নেই বেশ কয়েক মাস। এ সময়টায় সাদা বলে একদিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটার।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক আর তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় ও শাহাদাত হোসেন দিপুরা কয়েকজন এইচপির হয়ে লাল বলে অনুশীলন করলেও ম্যাচে খেলেননি একদমই। তাই তাদের আগেভাগে পাকিস্তান উড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে একটি চারদিনের ম্যাচ খেলানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
সে ম্যাচে মাহমুদুল হাসান জয় ( ৬৩) ছাড়া আর কেউ রান পাননি। জয় হাফসেঞ্চুরি হাঁকালেও গ্রোয়েন ইনজুরি শিকার হয়েছেন। তার প্রথম টেস্ট খেলার সম্ভাবনা খুব কম। একজন ইনফর্ম ব্যাটার কমে যাওয়ার অর্থ ব্যাটিং শক্তিও কমে যাওয়া। একঝাঁক অফফর্মের ব্যাটার ও চারদিনের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ না খেলে লাল বলে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়।
ওদিকে টেস্ট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে একাদশ চূড়ান্ত পাকিস্তানের। পাকিস্তানের দল দেখে বোঝা যাচ্ছে, গতিতেই টাইগারদের কাবু করতে চায় তারা।
চার দ্রুতগতির বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, খুররম শেহজাদ ও মোহাম্মদ আলী আছেন একাদশে। রাওয়ালপিন্ডির সবুজ ঘাসের পিচে তারা ঝড় তুলতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের ব্যাটারদের সামনে তাই কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ব্যাটারদের জ্বলে ওঠা ও পাকিস্তানি ফাস্টবোলারদের সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করার ওপরই নির্ভর করবে ম্যাচে বাংলাদেশের ভাগ্য।
২ বছর আগে এই মাঠে নাসিম শাহ আর শাহিন শাহ আফ্রিদির বারুদে বোলিংয়ের মুখে ইনিংসে হেরেছিল বাংলাদেশ। বাবর আজম (১৪৩) ও শান মাসুদের (১০০) জোড়া শতকে ৪৪৫ রান করেই ইনিংসে জিতেছিল পাকিস্তানিরা।
কারণ টাইগার ব্যাটাররা কেউই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ২৩৩ আর পরের বার ১৬৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। এবার সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ব্যাটাররা কী করেন, সেটাই দেখার।