পরিবেশ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ন্যায়বিচার, জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) সাভারের ব্র্যাক সিডিএম-এ অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস-এ ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, তার সারাজীবনের লড়াই একই—কীভাবে কর্পোরেটের দখলদারিত্ব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যায়, কীভাবে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করা যায়, কীভাবে তাদের আইনি কাঠামোর মধ্যে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা যায় এবং কীভাবে উন্নয়নকে পরিবেশমুখী করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি তিনটি জাতীয় অগ্রাধিকার তুলে ধরেন; একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন, গুরুত্বপূর্ণ শাসনব্যবস্থার সংস্কার এবং দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণ হারানোদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
তিনি পরিবেশ প্রশাসনে চলমান সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে ২২ বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগের কঠোর প্রয়োগ, দেশজুড়ে প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ, প্রধান নদী ও বনজ বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার, এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জোরদার করা।
বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের পুনর্ব্যক্ত অঙ্গীকারও তিনি তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি অনুমোদিত বন নীতিতে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর অবাধ, পূর্বানুমতিপ্রাপ্ত ও অবহিত সম্মতির বিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক পরিবেশগত অবস্থার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, প্রবাল বাস্তুতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে সেখানে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিপজ্জনক বায়ুদূষণ কমাতে জোরদার অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যদিও কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা ফেনীর নজিরবিহীন বন্যাদুর্গত অবস্থা এবং নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক সীমান্তপারের পানির প্রবাহসহ দেশের বাড়তে থাকা জলবায়ু ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন।
তিনি জানান, জলবায়ু ন্যায়বিচার তার দুই মন্ত্রণালয়ের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্পনির্ভরতা কমিয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জানান, সরকারি সব কার্যালয়ে কার্যকর রুফটপ সোলার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নির্মূলের চলমান সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবেশ ন্যায়বিচার একটি মূল্যবোধনির্ভর ধারণা। মানুষ ও প্রকৃতিকে সত্যিকারের মূল্য দিতে চাইলে আমাদের কার্যক্রমে সেই প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ সংস্কারগুলো ধরে রাখবে এবং আরও এগিয়ে নেবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান, সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)-এর চেয়ারম্যান মির্জা কামরুল হাসান এবং বেলা’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা ইসলাম।

