নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে জেন-জিদের বিক্ষোভ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর বালুয়াটার এলাকায় দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে জেন-জি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কিছু তরুণ। রোববার রাতে বালুয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে এই বিক্ষোভ করেছেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নতুন করে তিনজন মন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
দেশটির জেন-জি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সুদান গুরুং নামের এক নেতা ও তার অনুসারীরা ওই বিক্ষোভ করেন। নিজেদের জেন-জিআন্দোলনের নেতা দাবি করে তারা মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের আগে তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের পরামর্শ করা হয়নি। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী সুশিলা কার্কির পদত্যাগ দাবি করেন।
বিক্ষোভ চলাকালে গুরুং বলেন, আমরা যদি আবার রাস্তায় নামি, তাহলে কেউই আমাদের থামাতে পারবেন না। আমরা তাদের যেখানে বসিয়েছি, সেখান থেকে টেনে নামাব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্যাল নিজেই ভেতর থেকে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে নিচ্ছেন।
গত সপ্তাহে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে আহত ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদেরও রোববার রাতের বিক্ষোভে নিয়ে আসেন গুরুং।
এদিকে, দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি আইনজীবী আর্যালকে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। এর আগে, রমেশ্বর খনালকে অর্থমন্ত্রী এবং কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানি মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন তিনি।
ওম প্রকাশ আর্যাল দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে লোকমান সিং কার্কিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করে পরিচিতি পান। তিনি জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলায় লড়াই করেছেন এবং কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির আইন উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কির নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময় তিনি প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়া কার্কির শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে যাওয়া রমেশ্বর খনাল দেশটির সাবেক অর্থ সচিব ছিলেন। তিনি সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংস্কার সুপারিশ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কেপি অলি সরকারের কাছে ৪৪৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে অর্থনীতির দুর্বল দিক, সমস্যার কারণ, তাৎক্ষণিক করণীয় এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সুপারিশ করা হয়।
আর কুলমান ঘিসিং দেশটির নতুন সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নেপালের লোডশেডিং সমস্যা দূর করায় দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। কয়েক মাস আগে অলি সরকার তাকে সরিয়ে দিয়ে হিতেন্দ্র দেব শাক্যাকে নিয়োগ দিয়েছিল।
দেশটির একাধিক সূত্র বলেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্কি প্রথমে টেলিফোনে তিনজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাদের অফিসে ডেকে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর আগেই দেশটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সবিতা ভান্ডারীকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন কার্কি।
রোববার সকালের দিকে প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটির সঙ্কটকালীন সর্বোচ্চ ১১ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীরা একাধিক দপ্তরের দায়িত্বও পেতে পারেন।
কার্কি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। জেন-জি আন্দোলনের চাপের মুখে কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর তাকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের পরপরই প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দিয়ে দেশটিতে আগামী ৫ মার্চ নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন তিনি।