নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি
নির্বাহী আদেশেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার।
তিনি বলেন, অন্তবর্তীসরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ শান্তিপূর্ণপরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতারআন্দোলনের এই বিজয়কে দুষ্কৃতকারীরা যেন নস্যাৎ করতে না পারে এজন্য সাংবাদকিসহ দেশবাসীকে সোচ্চারথাকতে হবে এবং কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালনকরতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের ঐক্যকে আরও দৃঢ়তার এবং মজবুত করতে হবে। আমরা একটা ষড়যন্ত্রের মধ্যে সময় অতিবাহিত করছি।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার আল-ফারুক সোসাইটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধকরণের গান পুরোনো, পুরোনো রেকর্ড। যখনই ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে, সরকারের পতন হবে হবে, তখনই জামায়াত নিষিদ্ধ করা হলো। তবে জামায়াত চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। আমি তখন কারাগারে, আমিরের নির্দেশে জামায়াত কোনো বিক্ষোভ করেনি। কোনো প্রতিবাদ, সহিংসতা করেনি। আমরা দেশবাসীর কাছে ছেড়ে দিয়েছি। এই অত্যাচারী শাসক নিজে বাঁচতে না পেরে জামায়াত নিষিদ্ধ করল। নিজে বাঁচার জন্য আর কিছু পায়নি, এটি করে শেষ চেষ্টা করল। কিন্তু তাতেও বাঁচতে পারেনি। সরকার ইচ্ছা করলে যেই ধারায় নিষিদ্ধ করল, সেই ধারায় আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আদেশটা উইড্রো করতে পারে। নির্বাহী আদেশে এটা পারেন। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নির্বাহী আদেশেই নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে আদেশটা দিয়ে আমাদের নিষিদ্ধ করল সেই সরকারতো নিজেই অবৈধ সরকার। একটা অবৈধ সরকারের আদেশও অবৈধ। এই আদেশকে আমরা মানি না। নৈতিক দিক দিয়ে জামায়াতে ইসলামী স্বীকৃত। আমরা আশাবাদী আমাদের অধিকার ফিরে পাবো।
আগামী নির্বাচনে জামায়েত এককভাবে লড়াই করবে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। গ্রহণযোগ্য সব নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করবে। তবে এখনো বলার সময় আসেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বলে দেবে কোন কৌশলে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, কৌশলগত কারণেই ২০ দলীয় জোটে তারা নেই। তবে বিগত এজোটের সকল শরিক দলের সাথেই সুসম্পর্ক রয়েছে তাদের। একটি শুষ্ক নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে তা দিতে প্রস্তুত জামায়াতে ইসলামী।
তিনি আরও বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে আমরা এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশ গড়ার কাজে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়োজিত রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ঐক্য সুদৃঢ় হবে এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে একাকার হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত আমরা মোকাবিলা করব ইনশাআল্লাহ।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, হাজারো মানুষের তাজা প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে আজকে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এঅর্জনের একমাত্র কৃতিত্ব শিক্ষার্থীদের, আমাদের সন্তানদের। আমরা যা গত ১৫ বছরে করতেপারিনি আমাদের সন্তানেরা তা করে দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করার জন্য আপনাদের প্রিয়জন শহীদ হয়েছেন। শাহাদাত বরণকারী এসব ছাত্র জনতা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সরকারকেই সব শহীদের পরিবারের ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের রক্তের ওপরে আজকের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে সব শহীদ পরিবারের সার্বিক প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। যারা আহত হয়েছে এবং যারা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সকলকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন করতে হবে।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে ধেয়ে আসা আকস্মিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় এসব এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ভারত সরকার এই বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারার ব্যবস্থা করেছে। এসব এলাকার বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধকোটি মানুষ। মাছের ঘের, জমির ফসল, তরি তরকারী, ফলের বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে।অসংখ্য গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বানের পানিতে ভেসে গেছে। গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চাল ছুঁয়েছে বন্যারপানি। এমন পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন লাখো কোটি মানুষ। গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলারবিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটে যান এবং বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। আমাদের ত্রাণ ও বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কথিত বন্ধু ভারত ফারাক্কাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের বিশাল এলাকা মরুভূতিতে পরিণত করেছে। ভারত শুকনো মৌসুমে পানি আটকিয়ে রাখে, আর বর্ষায় মৌসুমে রাতের আঁধারে একসাথে সব গেট খুলে দেয়। গ্রীষ্মে যখন আমাদের পানির প্রয়োজন হয়, তখন তারা আমাদেরকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে। পানির অভাবে হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়। আবার বর্ষার মওসুমে যখন পানির প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসায়। ভারত সরকারের এহেন অমানবিক কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক। স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে ভারত আমাদের কেমন বন্ধু!
এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালামআজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনাজেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, মহানগরী নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীরহোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গওসুল আযম হাদী, মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ নূরুল্লাহ, জেলা সভাপতি মো. রিয়াদ হোসাইন বেলাল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।