নাগরিক তথ্য বিক্রি করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকায়!
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত ১১ কোটির বেশি বাংলাদেশির ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে— এই তথ্য ২০ হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে। তবে, মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের নাম রয়েছে, যা তদন্তাধীন রয়েছে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থানায় এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়, জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন— তারেক এম বরকতুল্লাহ (সাবেক পরিচালক, ডাটা সেন্টার), ওয়াহিদুর রহমান শরীফ (ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেসের পরিচালক) এন এম জিয়াউল আলম (সাবেক সিনিয়র সচিব, আইসিটি মন্ত্রণালয়), মাহবুবুর রহমান (সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), আবদুল বাতেন (সাবেক পরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ) ও আশরাফ হোসেন (সাবেক প্রকৌশলী, নির্বাচন কমিশন)।
এছাড়াও, মামলায় আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সরকারি কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এখন তদন্ত চলছে, এবং আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নির্বাচন কমিশনের তথ্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি বা বিনিময় করতে পারবে না।
২০১৯ সালের এপ্রিলে ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের একটি মিরর কপি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে প্রদান করা হয়। এরপর, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এই তথ্য ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়। ডিজিকন কোম্পানি এই তথ্য ১৮০টিরও বেশি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে porichoy.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের অধীনে ১১ কোটির বেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত একটি ডাটা সেন্টার রয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে স্বীকৃত। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে এই তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে।
এ পর্যন্ত, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের ২০ হাজার কোটি টাকার ই-ট্রানজেকশনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা আইনভঙ্গ করে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।