দেশে আর যেন নিপীড়নের শাসন ফিরে না আসে : গণপূর্ত উপদেষ্টা
গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ভয় ও নিপীড়নের শাসন ফিরে না আসে। একটি দমন-পীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থার পতনের পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ১ম ‘আন্তর্জাতিক জুলাই বিপ্লব ২০২৪’ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হয়। গুম ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। হাজারো রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিককে অপহরণ, নির্যাতন বা স্থায়ীভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বহু পরিবার আজও জানে না, তাদের সন্তান জীবিত নাকি অচেনা কোনো কবরে শায়িত আছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচন, গণমাধ্যম ও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা অপকৌশল ব্যবহৃত হয়। কারাগারগুলো ভরে গিয়েছিল অপরাধী দিয়ে নয়, দেশপ্রেমিকদের দিয়ে। ফেসবুক পোস্টই ডেকে আনত মাঝরাতের পুলিশি অভিযান। শুধু মতপ্রকাশের দায়ে একটি ভালো বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত কিংবা শহীদ করা হয়েছে।
আদিলুর রহমান বলেন, আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে ‘অপরাধী’ হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাধা দেওয়া হতো।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনই ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি নয়। বিচারব্যবস্থাকে ভয়মুক্ত করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনী সংস্কার করতে হবে এবং ছাত্র আন্দোলনকে যেকোনো দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে আদিলুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণিকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা বিপদজনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
উদ্বোধনী অংশে ‘ইন্ডিয়ান হেজিমোনি অ্যান্ড জুলাই রেভুলিউশন ২০২৪’ শিরোনামে কি-নোট বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কোনো দানশীলতা নয়, বরং সূক্ষ্ম ভূ-রাজনৈতিক হিসাব ছিল। ভারত ভেবেছিল পাকিস্তান ভেঙে গেলে বাংলাদেশ ভারতের অনুগত হবে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলিম, যারা কখনোই হিন্দু-প্রধান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই দেশে ইসলামী পরিচয়ের পুনরুত্থান ঘটে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ভারত তাদের পাঁচটি লক্ষ্য-অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা হুমকি নিয়ন্ত্রণ, ভূ-প্রাকৃতিক সুবিধা ব্যবহার, দ্বিপক্ষীয় সমাধান ও সুরক্ষা যন্ত্র হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায়। ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হয়েও বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন করে, কারণ শেখ হাসিনার মাধ্যমেই তাদের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছিল। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটে ভারতের সমর্থনই তার প্রমাণ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিচ এবং তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা।
সম্মেলনের শুরুতে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের বাবা-মা তাদের বক্তৃতায় দ্রুত জুলাই হত্যার বিচার ও অপরাধীদের সাজার দাবি জানান। ছাত্রনেতা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এ সম্মেলনে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আন্তর্জাতিক অতিথি, কূটনীতিক, মানবাধিকার কর্মীরা বক্তৃতা করেন।