দুর্দান্ত বাংলাদেশের সামনে ১২৬ রানে শেষ আফগানিস্তান
হারলেই হোয়াইটওয়াশ। তাও আবার ঘরের মাঠে! বাংলাদেশের সামনে চরম লজ্জার চোখ রাঙানি। এমন ম্যাচেই কিনা আবার টসে হেরে বসলো বাংলাদেশ। টস হেরে বোলিংয়ে নামায় আগের ম্যাচের স্মৃতি নিশ্চয়ই কারও কারও মনে এসেছিল। এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই যে বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আজ (মঙ্গলবার) আর তেমনটা হয়নি। বরং দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের পথটা তৈরি করে রাখলো। এখন বাকি কাজটা ব্যাটারদের।
আজ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা ৪৫.২ ওভারে মাত্র ১২৬ রানে অলআউট হয়েছে।
সফরকারী ব্যাটারদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। যেখানে সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর শরীফুল। বাঁহাতি পেসার শুরুতেই এলোমেলো করে দেন আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপ। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আবার পেয়েছেন উইকেট। সেকারণেই সফরকারীদের হারানো প্রথম ৭ উইকেটের ৪টিই শরীফুলের।
প্রথম দুই ওয়ানডে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তামিম ইকবালের অবসর-ঘটনায় দলের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যায়। মাঠেও সেটির প্রভাব পড়েছে যথেষ্ট। ওই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর মিশন এই তৃতীয় ওয়ানডে। গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ।
যার একটি শরীফুল। একাদশে সুযোগ পেয়েই সামর্থ্যের প্রমাণ আবারও দিলেন এই পেসার। বাংলাদেশের উইকেট উদযাপনের শুরুটা আসে তার হাত ধরে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরানকে আউট করে এনে দেন প্রথম উইকেট। মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়ার আগে মাত্র ১ রান করতে পারেন ইব্রাহিম।
ওই উৎসব শেষ হতে না হতেই আবার শরীফুলের আঘাত। এবার শিকার রহমত শাহ। ওই মুশফিুকের গ্লাভাসবন্দি করেই তাকে ফেরান শূন্য রানে।
শরীফু্ল একদিক দিয়ে উইকেট নিচ্ছেন, পেস বোলিং সঙ্গী তাসকিন আহমেদ উইকেট না পেলে বেমানান হয় না! খানিক পর ডানহাতি এই পেসারও যোগ দিলেন উইকেট উৎসবে। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা রহমানউল্লাহ গুরবাজের উইকেট তার দখলে। মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়ার আগে গুরবাজ করতে পারেন মাত্র ৬ রান।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারের বিদায়ের পর চাপ সামলাতে মাঠে আসেন মোহাম্মদ নবি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারও ঠেকাতে পারেননি বাংলাদেশের আক্রমণ। শরীফুলের তাণ্ডবে তিনিও বিধ্বস্ত। মাত্র ১ রান করে এলবিডব্লিউ নবি। আর শরীফুলের নামের পাশে তৃতীয় উইকেট। এই পেসারের তোপে প্রথম পাওয়ার প্লেতে আফগানিস্তান নিতে পারে ৪ উইকেটে মাত্র ২১ রান।
চাপে থাকা আফগানদের আরও চেপে ধরেন সাকিব আল হাসান। নাজিবউল্লাহ জাদরান দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সাকিবের ঘূর্ণির সামনে টিকতে পারেননি। ২২ বলে ১০ রান করে তিনি এলবিডব্লিউয়ের শিকার।
অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির অবস্থাও একই। অনেকটা সময় ক্রিজ আঁকড়ে ছিলেন। একটা সম্ভাবনাও ধরা দিয়েছিল তার ব্যাটে। কিন্তু সেই প্রতিরোধ আর টিকলো কই! তাইজুল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ২২ রানে।
এরপর আবার শরীফুলের আঘাত। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই তার উইকেট। এবার বাঁহাতি পেসারের শিকার ৪ রান করা আব্দুল রহমান। তাতে আফগানরা ৬৮ রানে হারায় ৭ উইকেট।
দিশেহারা আফগানদের রান তারপরও ১০০ পেরিয়েছে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে। বিপদের সময় দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন তিনি। দলের সব ব্যাটার যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছেন, সেখানে সাত নম্বরে নেমে এই ব্যাটার দেখিয়েছেন তার ব্যাটিং শৈলী। টেলএন্ডারদের নিয়ে লড়াই করে সম্মানজনক একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন আফগানদের।
তাইজুলের বলে আট নম্বর ব্যাটার হিসেবে আউট যাওয়া জিয়া-উর-রেহমানের অবদানও যেমন কম নয়। মাত্র ৫ রান করেছেন, তবে খেলেছেন ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ বল। মুজিব উর রহমানের ব্যাটিংটাও যেমন। ৩৪ বল খেলে করেছেন ১১টি গুরুত্বপূর্ণ রান। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে ওমরজাইয়ের সঙ্গে গড়েন ৩৬ রানের জুটি।
আর শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়া ওমরজাই খেলেন ৫৬ রানের চমৎকার ইনিংস। তাসকিনের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৭১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান এক বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার শরীফুল। বাঁহাতি পেসার ৯ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। তাসকিন ৮.২ ওভারে ২৩ দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। তার মতো ২ উইকেট শিকার তাইজুলের। আর একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও মিরাজ। সাকিবের বোলিং ফিগারটা দেখার মতো, ১০-১-১৩-১।
ক্রিড়া প্রতিনিধি