দীপ্ত টিভির তামিম হত্যা/হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততা মিলেছে, ওসি প্রত্যাহার
রাজধানীর রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ১৬ জনকে আসামি করে যে মামলা করেছে, তাতে তিন নম্বর আসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল আলম রবি। প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবি। ওই কোম্পানি নিহত তামিমের বাবার জমিতে চুক্তির ভিত্তিতে একটি ভবন তৈরি করে। সেই ভবনের ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডেভেলপার কোম্পানির লোকেরা বাড়িতে ঢুকে তামিমে পিটিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলমের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে। তিনি কোম্পানির মালিক। তার সঙ্গে জমির মালিকের দ্বন্দ্ব ছিল।
এছাড়া এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মামুনের প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। মামুন তার শ্বশুরের নামে ওই ভবনে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের কর্মীসহ পাঁচজনকে। তারা হলেন- আব্দুল লতিফ (৪৬), কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (২০)।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রুহুল কবির খান।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা রুহুল কবির খান বলেন, ওই জমির মালিক নিহত তামিমের বাবা। সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়, তাতে জমির মালিককে পাঁচটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ডেভেলপার কোম্পানি দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে, বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ। এ নিয়েই গত তিন বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এর জের ধরে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমর্কর্তা মামুনসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকালে ভবনে ঢুকে অতর্কিতে হামলা করলে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিম গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি রুহুল কবির খান বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখছি না। আমরা অপরাধ দেখছি, তাদের অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যেই হোক, দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেবো। প্রাথমিকভাবে আমরা তার (বিএনপি নেতা রবি) সম্পৃক্ততা পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তাকে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করে দেখবো।
হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতার দায় কতটা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি রুহুল কবির খান বলেন, জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব। সুতরাং তার (কোম্পানির এমডি) তো দায়ই থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি- এমন অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরাও প্রাথমিকভাবে তার (ওসি) অবহেলা পেয়েছি। দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাতিরঝিল থানার ওসিকে এর মধ্যেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।