তুরস্কে শান্তি সংলাপের মধ্যেই পাক-আফগান সীমান্তে সংঘাত, নিহত ৫ আফগান
তুরস্কে চলমান শান্তি সংলাপের মধ্যেই সংঘাত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে। সংঘাতে কমপক্ষে ৫ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ঘটেছে এই সংঘাত ও নিহত-আহতের ঘটনা। পাক-আফগান সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের জেলা স্পিন বোলদাকের জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে এএফপিকে বলেছেন, “আজকের (বৃহস্পতিবার) ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪ জন নারী এবং একজন পুরুষ। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।”
নিহত এবং আহতরা সবাই আফগানিস্তানের নাগরিক। সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানে কেউ নিহত কিংবা আহত হয়েছে কি না— এখনও জানা যায়নি।
আফগান সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, সংঘাতের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট এবং পাকিস্তান বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেশী এবং একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র আফগানিস্তানের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে তিক্ততা চলছে পাকিস্তানে। বর্তমানে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ২০২১ সালে তালেবান বাহিনী কাবুল দখল এবং সরকার প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে শুরু হয়েছে এ অবস্থা।
দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার প্রধান কারণ পাকিস্তানের তালেবানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। কট্টর ইসলাপন্থি এই গোষ্ঠীটির ধারাবাহিক হামলায় গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন কয়েক হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষ। দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে গোষ্ঠীটি। সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে বেশ কয়েক বছর আগে এই গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।
তবে এতে টিটিপির কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং কাবুলে তালেবান সরকার অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দিনকে দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে গোষ্ঠীটি। পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য খাইবার পাখতুনখোয়া টিটিপির প্রধান ঘাঁটি অঞ্চল। টিটিপির প্রধান লক্ষ্য খাইবার পাখতুনখোয়াকে পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন করে বর্তমান আফগানিস্তানের আদলে একটি কট্টর ইসলামপন্থি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে টিটিপি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি।
খাইবার পাখতুনখোয়ার সঙ্গে সীমান্ত আছে আফগানিস্তানের। কাবুলে আসীন তালেবান সরকার নিয়মিত টিটিপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদত দিচ্ছে বলে ২০২১ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার অভিাযোগ করেছে ইসলামাবাদ, তবে কাবুল বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত ৯ অক্টোবর রাতে কাবুলে বিমান অভিযান চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে নিহত হন টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ. দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ টিটিপির বেশ কয়েক জন সম্মুখ সারির নেতা।
এ অভিযানের ২ দিন পর ১১ অক্টোবর খাইবার পাখতুনখোয়ার সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি সেনা চৌকিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয়। ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলে এই সংঘাত। পাক সেনাবাহিনীর আন্ত:বিভাগ সংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর)-এর তথ্য অনুসারে, সংঘাতে আফগান সেনাবাহিনীর ২ শতাধিক এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৩ জন যোদ্ধা নিহত হন।
চার দিন সংঘাতের পর গত ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে যায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এই বিরতির মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় সংলাপে বসে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরকারি প্রতিনিধিরা। পরে ২৫ অক্টোবর সংলাপের ভেন্যু স্থানান্তর করা হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে।
ইস্তাম্বুলে এখনও চলছে সংলাপ এবং এর মধ্যেই ফের সীমান্তে সংঘাতের ঘটনা ঘটল।
এদিকে বৃহস্পতিবারের সংঘাত ইস্যুতে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান উভয়েই পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) ইস্তাম্বুলে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধিদের তৃতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হয়েছে আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ সন্ধ্যায়ই স্পিন বোলদাকে বন্দুক হামলা চালাল পাকিস্তান।”
তিনি আরও বলেন, “শান্তি আলোচনাকে সম্মান বজায় রাখা এবং বেসমারিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে ইসলামিক এমিরেত (আফগানিস্তান) এই হামলার কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সীমান্তের ওপারে আফগানিস্তান থেকে প্রথমে গুলি ছোড়া হয়েছিল। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সুবিবেচনা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে তার জবাব দিয়েছে।”

