তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হবে রাষ্ট্রপতির এপিএসকেও
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে মারধরের ঘটনায় এডিসি হারুন অর রশিদ, সানজিদা আফরিন, প্রত্যক্ষদর্শী, আনসার ও নার্সসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। এবার একই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে রাষ্ট্রপতির একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনকেও। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এপিএস মামুন ছাড়া বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তার বক্তব্যও নেওয়া হবে।
ওই ঘটনার পর গঠন করা হয়েছিল ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এতে প্রধান করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপারেশন বিভাগের ডিসি আবু ইউসুফকে। এছাড়াও ডিবির মতিঝিল বিভাগের এডিসি ও ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এডিসিকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে। এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে কমিটির কার্যক্রম।
তদন্ত কমিটিতে থাকা এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হারুন ও সানজিদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মী ও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেই ঘটনায় কার ভূমিকা কী ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। এপিএস মামুনের ব্যাপারে এডিসি সানজিদার উত্থাপিত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এডিসি হারুনকে গালিগালাজ করছেন। হারুন হাসপাতালের সেই কক্ষের এক কোণায় দাঁড়িয়েছেন। তবে তাকে সেই ভিডিওতে কোনো প্রতিবাদ বা কথা বলতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: এডিসি হারুন সম্পর্কে এলাকাবাসীর বয়ানে যা জানা গেল
তদন্ত কমিটির সদস্য নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, আমরা বেশ কিছু লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এই তালিকায় ছাত্রলীগের সেই তিন নেতা ছাড়াও অনেকে রয়েছে। প্রয়োজনে মামুন সাহেবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে তদন্ত কমিটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত মূলত বারডেম হাসপাতালে। চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন এডিসি সানজিদা আফরিন। সেখানে শুরু হয় কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি। তবে শুরু থেকে এডিসি হারুনের পক্ষ নিয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদসহ আরও অনেকে কথা বলেছেন। এমনকি সানজিদাও বলেছেন, তার স্বামী আগে এডিসি হারুনের গায়ের হাত তুলেছিলেন। যদিও বিষয়টির ব্যাপারে তিনি জোরালো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
এ ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, অপরাধ যেই করুক, শাস্তি পেতে হবে। আপনারা যে পুলিশ অফিসারের কথা বলেছেন তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা সেটা নেওয়া হয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতন করেন এডিসি হারুন-অর-রশীদ। তারা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। তারা অভিযোগ করেন— থানায় নিয়ে পেটানো হয়েছে তাদের। ছাত্রলীগের পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনসহ সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পিটিয়েছেন।
ঘটনার পর এডিসি হারুন-অর-রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি সেদিন তার বাবা মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক পবিত্র কুমারের কাছে গিয়েছিলেন। ওই সময় দুপুর ২টার দিকে এডিসি সানজিদা তাকে কল করেন। তিনি তাকে জানান তার বুকেব্যথা। এজন্য বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক রশিদের সিরিয়াল (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) চান। এরপর রমনা থানার ওসির মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টায় সিরিয়ালের ব্যবস্থা করেন তিনি।
ফেঁসে যেতে পারেন এপিএস মামুন
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঝামেলার শুরু করেছেন এপিএস মামুনই। ইতিমধ্যে যার প্রমাণও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সেই ঘটনার ফুটেজ রয়েছে হাসপাতালের সিসিটিভিতেও। ঘটনার সময় ছাত্রলীগ নেতার ধারণ করা ভিডিওটিও সংগ্রহ করেছে তদন্ত কমিটি। সেই ভিডিওতে এপিএস মামুনকে ঝামেলা করতে দেখা গেছে। হারুনের গায়ে হাত তোলার প্রমাণও মিলেছে তাতে। সানজিদাও অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী আগে এডিসি হারুনের গায়ে হাত তুলেছেন।
-ঢাকা মেইল/