ঢাকা টেস্টে কি সত্যিই ফেবারিট বাংলাদেশ!
যদিও বাংলাদেশ আগে কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্টে হারাতে পারেনি, তারপরও ইতিহাস, পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরলে এ সিরিজে বাংলাদেশকেই ফেবারিট মানছেন অনেকে। প্রোটিয়াদের ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উপমহাদেশের স্লো, লো পিচে স্বচ্ছন্দে খেলার নজির খুব কম।
নিজেদের স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করতে না পারার কারণেই গত ১০ বছর তারা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি বাংলাদেশের মাটিতেও এসেও জিততে পারেনি। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৫৩ রানের জয়টিই শেষ। এরপর বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় খেলতে এসে ১৩ টেস্টে আর জয়ের মুখ দেখেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
সর্বশেষ ২০২১ সালে পাকিস্তান সফরে এসে ২ টেস্টের সিরিজে রাওয়ালপিন্ডি (৯৫ রানে) ও করাচিতে (৭ উইকেটে) হেরে ঘরে ফিরে যায় প্রোটিয়ারা। এ কারণে টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও মনে করছেন ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের সাথে জেতার এটাই সেরা সুযোগ। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন কিনা? সেটাই দেখার।
তবে প্রোটিয়াদের হারাতে হলে শান্তর দলকে নতুন ইতিহাস রচনা করতে হবে। কারণ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে কিউইদের হারাতে পারলেও বাংলাদেশ কিন্তু ঘরের মাঠেও টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেনি।
দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ৬ টেস্ট খেলে ৪ টিতেই (২০০৩-এর এপ্রিল-মে’তে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ১৮ রানে এবং চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৬০ রানে, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে চট্টগ্রামে ইনিংস ও ২০৫ রানে আর ঢাকার মিরপুরে ৫ উইকেটে) হেরেছে বাংলাদেশ।
একটি ম্যাচেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলতে পারেনি টাইগাররা। আর ৯ বছর আগে ২০১৫ সালে সবশেষ বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশ হার এড়ালেও সেটা ছিল পুরোপুরি বৃষ্টির সহায়তায়। মিরপুর ও চট্টগ্রামে ২ টেস্টের সিরিজটি অমিমাংসিত থেকে যায়। তবে শুধু ড্র শুনে ভাববেন না বাংলাদেশ লড়ে ব্যাট ও বলে নৈপুণ্য দেখিয়ে তবেই হার এড়িয়েছে।
বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন। দুটি টেস্টই বৃষ্টির কারণে ড্র হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলায় হওয়া দ্বিতীয় টেস্টটি ছিল বৃষ্টিতে ঢাকা। ৫ দিনে খেলা হয়েছে মোটে ১ দিন। বাকি ৪ দিন বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে গেছে। প্রথমদিন সাকল্যে ৮৮.১ ওভার খেলা হয়েছে। তারপর টানা বৃষ্টিতে পরের ৪দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি।
চট্টগ্রামে ওই সিরিজের প্রথম টেস্টটিও বৃষ্টির কারণেই নিষ্ফলা থেকে গেছে। ৫ দিনের শেষ ২দিন খেলাই হয়নি। আর প্রথম তিনদিনে সর্বমোট ৯০.১ ওভার খেলা হয়েছিল। কাজেই দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে জিততে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে হবে।
সাকিব আল হাসানের না থাকাটা অনেক বড় মাইনাস পয়েন্ট। যদিও টেস্টে সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাটিতে একটি জাদুকরি স্পেলও নেই। ৬ টেস্টে প্রোটিয়াদের সাথে সাকিবের ট্র্যাক রেকর্ড বড় দুর্বল। উইকেট মাত্র ১৩টি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০০৮ সালে পরপর ২ টেস্টে (ব্লুমফন্টেইনে ৫/১৩০, আর সেঞ্চুরিয়নে ৬/৯৯) ৫ বা তার বেশি উইকেটের পতন ঘটানোর রেকর্ড আছে সাকিবের।
তবে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের এগিয়ে থাকার জায়গা অন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের যে দলটি বাংলাদেশে এসেছে, সেই দলের টেন্ডা বাভুমা ছাড়া আর কেউ বাংলাদেশের মাটিতে কখনো টেস্ট খেলেননি। বাভুমাও ঢাকা টেস্ট খেলবেন না। কাজেই বাংলাদেশের মাটি, উইকেট ও বোলিং সম্পর্কে ধারণা নেই প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের। সেটা অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ শান্ত বাহিনীর জন্য। সেটা কাজে লাগিয়ে প্রোটিয়াদের বধ করতেও পারে টাইগাররা।