ডিজিটাল নিরাপত্তা উন্নত নয় বলেই হ্যাক হচ্ছে, তথ্য চলে যাচ্ছে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা মানে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাইরের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নত না বলেই হ্যাক হচ্ছে, তথ্য চলে যাচ্ছে।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ইন্টারনেট শাটডাউনসহ’ সব ধরনের ‘ডিজিটাল নির্যাতনের’ প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ১২ জুলাইয়ের সমাবেশসহ বিভিন্ন আয়োজনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয় তুলে ধরা হয়। বিএনপি বলেছে, একই দিন একই সময়ে সরকারি দলের সমাবেশস্থলের ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক ছিল।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, যেসব দেশে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেখানে যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। কিন্তু বাংলাদেশেও যুদ্ধ চলছে? ইন্টারনেট শাটডাউন নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের নামে সব রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে নাগরিকদের সাইবার জগতের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করে বিএনপি। দলটি বলেছে, তাদের অযোগ্যতা এবং অদক্ষতার কারণে প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ঘটেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ইসরায়েলি প্রযুক্তি পেগাসাস তৈরি করা হয়েছিল জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে। কিন্তু কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারেরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার সেই প্রযুক্তি কিনে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, তাঁর নিজের ফোন একবার গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে নেয় এবং পাসওয়ার্ড চেয়ে ফোন খুলে ক্লোন করে সব তথ্য নিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, ডিজিটালাইজেশন এই সভ্যতার আশীর্বাদ। কিন্তু বর্তমানে এই সরকার এই ডিজিটালাইজেশনকেই জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ডিজিটাল মাধ্যমে নিপীড়ন, জনগণের ওপর নজরদারি, ফোন কল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেওয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ব্ল্যাকমেল করা, ভুল তথ্য, বিকৃত তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালানোসহ নানা অপরাধ করে চলেছে এই সরকার।
বিএনপি বলেছে, জনগণের টাকায় নজরদারি প্রযুক্তি কিনে জনগণের ওপরই গোয়েন্দাগিরি করছে সরকার। ব্যক্তিগত মুঠোফোনের ওপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মতো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতিমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। আবার বিরোধী রাজনীতিকদের আইডি হ্যাক করে তাঁদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বারা নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্রযুক্তির অপব্যবহার যত ধরনের—সবই করছে তারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিচালনা এবং সেবার মান দেখভাল করা। কিন্তু জনগণের টাকায় প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকেই বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়নের জন্য কাজে লাগাচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন অবিলম্বে বাতিলেরও দাবি জানায় দলটি।
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক