ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি চীনের অর্থনীতিকে কি দুর্বল করছে?
গত নভেম্বরে চীনের শিল্প উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও খুচরা বিক্রি হতাশা তৈরি করেছে। গত মাসে উৎপাদনের সাথে সাথে ভোক্তা চাহিদা না বাড়ায় চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই চীনা পণ্যের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি ছুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের আগেই শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় তৈরি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নভেম্বরের শেষ দিকে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট শুল্কচাপের ঘোষণাও দিয়েছেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক এমন সময়ে খারাপ হতে চলেছে যখন চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও দুর্বল বলে বিবেচিত হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করবেন। এরপর গত মাসে তিনি জানান, চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এবং কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানীকৃত সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপ করবেন, যা তার প্রথম দিকের নির্বাহী আদেশের একটি হবে।
ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস (এনবিএস) এর তথ্যমতে, চীনের শিল্প উৎপাদন নভেম্বরে ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে যা আগের মাস অক্টোবরে ছিল ৫.৩ শতাংশ। তবে খুচরা বিক্রি গত মাসে মাত্র ৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অক্টোবরে ৪.৮ শতাংশ ছিল।
চীনা অর্থনীতির ক্যাপিটাল ইকোনমিক্স প্রধান জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেছেন, “সাম্প্রতিক নীতির কারণে চীনের অর্থনীতি গত মাসে মন্থর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা মনে করি যে অর্থনীতি একবার ঊর্ধ্বমুখী হলে স্বল্পকালীন সমস্যা এটিকে আটকে রাখতে পারবে না। কারণ ট্রাম্প তার কিছু শুল্ক হুমকি কার্যকর করা শুরু করলে রপ্তানি চাহিদায় এর খুব একটা প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
তবে এনবিএসের মুখপাত্র ফু লিংঝুই একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, যে ভোক্তা চাহিদা পরিবর্তিত হয়নি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত রাখার জন্য আরও প্রচেষ্টার অব্যাহত রাখা হবে।
তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে নিজেদের নীতি বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চীন সব সময় নিজস্ব বিষয়ের ওপর মনোযোগ দেবে এবং তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করবে। একই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে অতি উদার থাকার রীতি পরিবর্তিত হবে না।’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘স্থিতিশীল, সবল ও টেকসই’ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক চীন। শি স্পষ্টভাবে জানান, বাইডেন প্রশাসনের ‘স্মল ইয়ার্ড, হাই ফেন্স’ নীতি এবং কিছু রিপাবলিকান নেতা উত্থাপিত ‘ডিকাপলিং’ নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষাবাদী অবস্থানের স্পষ্ট বিরোধী তিনি। সতর্ক করে বলেন, ‘এ উদ্যোগগুলো নিজের উপকার না করে অন্যদের ক্ষতি করবে।’
তার মতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশগুলোর পারস্পরিক নির্ভরতা অর্জন প্রয়োজন। একে ঝুঁকি হিসেবে নয়, ইতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এতে দুই পক্ষেই ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি হয়।