August 15, 2025
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শুল্ক চাপের মাঝেই চীন-ভারতের সম্পর্কে নতুন উষ্ণতা

চীন ও ভারতের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত মনোভাবের প্রেক্ষাপটে নীরবে ও সতর্কতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করছে বেইজিং ও নয়াদিল্লি। পুনরায় সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার আলোচনা থেকে উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সফরও শুরু করেছে চিরবৈরী এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফরে যাবেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে হিমালয় অঞ্চল লাগোয়া দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। ২০২০ সালে ভারত ও চীনের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সীমান্ত সংঘাতে সৈন্যদের প্রাণহানির ঘটনার পর দ্বিতীয়বারের মতো দুই দেশের মাঝে উচ্চ পর্যায়ের এই সীমান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে চীন সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। সাত বছর পর চীনে প্রথম কোনও সফরে যাচ্ছেন মোদি। সেখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনের ফাঁকে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ভারতের সঙ্গে চীনের পাঁচ বছরের সীমান্ত টানাপোড়েনের অবসানের পর দুই দেশের সম্পর্কে আকস্মিক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে। গত বছরের অক্টোবরে ভারত ও চীনের মাঝে সীমান্ত টহল বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও বিমান চলাচলের পথ খুলে যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন উত্তেজনার মাঝে চীন-ভারতের এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন; যা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারদের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্কের অন্যতম। এই পরিস্থিতিতে চীন ও ভারত ইতোমধ্যে ২০২০ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে রাজি হয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশের তিনটি হিমালয় সীমান্তে বাণিজ্য সহজীকরণ নিয়ে আলোচনা করছে। যদিও দুই দেশের মোট ১২৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের তুলনায় সীমান্ত বাণিজ্য সামান্যই। বিশেষজ্ঞরা এটিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘‘আমরা সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর জন্য চীনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখছি।’’ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রয়টার্সকে বলেছে, সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর মাধ্যমে সীমান্তবর্তী জনগণের জীবনযাত্রা উন্নয়ন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিনিময় বাড়ানোর কাজ শুর হবে। এছাড়া সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর বিষয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রয়েছে চীন এবং ভারত। এদিকে, ভারতের সরকারি একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানির জন্য নির্ধারিত অতিরিক্ত বিনিয়োগের নিয়ম শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে। যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার সম্ভাব্য নতুন দিকের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেয়ার করুন: