ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে
দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম করছে চীন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় দেশটি আরও চাপে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ধীরগতির ভোক্তা ব্যয় এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় মন্দার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য চীন রফতানির ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার ফলে সেই নির্ভরশীলাতেও বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছে দেশটি।
ট্রাম্পের বিজয়ের পর চীনের মুদ্রা ইয়ানের দাম অনেক বেশি কমে গেছে। দেশটির রফতানিতে অক্টোবরে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও এখন বহিরের দেশের চাহিদার হ্রাস এবং অন্যান্য দেশ থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনের রফতানির সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়েছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের চীনের অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বিজয় চীনা রফতানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিয়েছে।
ম্যাককোয়ারি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মতে, যদি ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে চীনের প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ কমে যাবে। এটি চীনের প্রত্যাশিত ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের প্রায় অর্ধেক। ম্যাককোয়ারির প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু বলেছেন, ট্রেড ওয়ার ২.০ চীনের চলমান প্রবৃদ্ধির মডেলকে শেষ করতে পারে, যেখানে রফতানি এবং উত্পাদন প্রধান বৃদ্ধির চালক ছিল।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক ডেভিড স্টেইনবার্গ বলেছেন, ট্রাম্পের প্রচারণায় চীনের ক্ষতির দিকে মনোনিবেশ করা রক্ষণশীলতাবাদ ছিল। চীনা আমদানির ওপর নতুন বাণিজ্য চুক্তি বা শুল্ক কমানোর জন্য গুরুতর রাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং কূটনীতি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল রাসেল বলেছেন, ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে শি জিনপিংয়ের প্রশংসক ছিলেন, পরে শুল্ক আরোপ করেছিলেন এবং মহামারীর সময় বেইজিংকে নিন্দা করেছিলেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ চীনের জন্য আরও ক্ষতিকর হতে পারে।
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক হেনরি গাও জানিয়েছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী ছিল, কিন্তু এবার এটি পুনরুদ্ধারের জন্য রফতানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের অর্থনীতি উচ্চ বেকারত্ব, সম্পত্তি সংকট এবং ঋণের চাপের মধ্যে আছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিতর্কিত বিষয়গুলিতে চীনের ওপর চাপ দেওয়ার জন্য শুল্ক ব্যবহার করতে পারে।
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিসার্চের পরিচালক ওয়াং ইউয়েশেং বলেছেন, চীনের প্রতিশোধ শুধুমাত্র মার্কিন-চীন বাণিজ্যের হ্রাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্য এবং অন্যান্য দেশে বাণিজ্য স্থানান্তর করার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চীনা নির্মাতা এবং রফতানিকারকরা বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। উত্তর চীনের কাংঝোতে কাচ তৈরির ব্যবসার মালিক লি ওয়েই বলেন, এটি আমাদের পণ্যগুলিকে প্রতিযোগিতামূলক করবে না এবং আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি তীব্রভাবে হ্রাস পাবে। সাংহাইভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা সোটেকের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ডং সিওন বলেছেন, যদি ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে এটি আমাদের মার্কিন ব্যবসাকে ব্যাহত করতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণরূপে শেষও করতে পারে।
চীনা পণ্যের উপর ৬০ শতাংশের বেশি শুল্ক ছাড়াও, ট্রাম্প চীন থেকে বৈদ্যুতিক যানবাহনে ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গ্রেটার চায়নার সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জিয়ানওয়ে সু জানিয়েছেন, নতুন পরিবেশের মুখোমুখি চীন। এখন দেশটির মোট সরবরাহ হ্রাস করতে হবে। কারণ চীনা উৎপাদনকারীদের ওপর ভিত্তি করে বাজারের আকার ছোট হয়ে যাবে। এটি ধীর জিডিপি প্রবৃদ্ধির কারণ হবে, যা দেশীয় ব্যয়কে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।