জামায়াতেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে: নুর
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুলহক নুর বলেছেন, স্বাধীন দেশে সকল নাগরিকের রাজনীতি, সভা-সমাবেশ, সংগঠন করার অধিকার আছে। জামায়াতেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে।
যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা দাবিতে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উত্তর বাড্ডা ওভারব্রীজের সামনে পদযাত্রা পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুলহক নুর বলেন, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আজকে আমরা রাস্তায় নেমেছি, ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাস্তায় নেমেছি। আমরা ভোট দিয়ে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাই, জনগণের ভোটের সরকার চাই, এটা বেআইনি কিংবা অন্যায় নয়। আমাদের দুঃখ ও দুর্ভাগ্য এই কথা বলায় গত কয়েক মাসে বিরোধী মতের ৩০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ডাকসুতে আমাদের উপর ছাত্রলীগ-মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নারকীয় তাণ্ডব চালাল। আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ.ফ.ম বাহাউদ্দীন নাসিম ছাত্রলীগের সভাপতি, সেক্রেটারিকে নিয়ে হাসপাতালে আমাদের দেখতে গেলেন আর সেই মামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ইয়ামিন, মশিউরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, অন্যদের হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এইভাবে আজকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদের ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করেছে। আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে এদেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে সবাই ভালোবাসতো, সাঈদীকে এই সরকার হত্যা করেছে। এটা জুডিশিয়াল কিলিং। একইভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে পায়ে শিকল পরিয়ে ছয় মাস পর পর জামিনের নামে নাটক করছে যাতে তিনি যেন রাজনীতি করতে না পারে। কারণ, আজকে খালেদা জিয়া যদি রাজপথে থাকতো এই আন্দোলন আরও তুঙ্গে চলে যেত। সরকার সেটা বুঝতে পেরে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রেখেছে।
নুর বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মামুনুল হক, জামায়াতের আমিরসহ সকলের মুক্তি চাই।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, আমাদের পরিস্কার কথা, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আপনারা দেখেছেন বাড্ডা থেকে পদযাত্রা নিয়ে আসার সময় রাস্তায় দু’পাশের মানুষ, বাসের মানুষ হাত নেড়ে সংহতি জানিয়েছে। অর্থাৎ তারা আর শেখ হাসিনাকে চায় না। ১৪ বছরের ভোট বঞ্চিত তরুণরা রাস্তায় নেমেছে, বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত তরুণরা কর্মসংস্থানের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, ১ দফা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবে না। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশলীগ দিয়ে জনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, গতকাল মিরপুরে এক ব্যক্তি পানির মধ্য থেকে একটা শিশুকে তুলে এনেছে, এই হচ্ছে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা। উন্নয়নের নামে এই সরকার আজকে আমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মারছে। এই সরকারের নৌকা পানিতে আর আমরা ভাসতে দেব না। এই নৌকা আমাদেরকে ডুবাতে হবে।
সরকার দেশে কোনো উন্নয়ন করে নাই, উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে ঋণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ঋণ করে করে আমাদের ঘি খাইয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে আমাদেরই।
তিনি আরও বলেন, সরকার বলছে, আমাদের নাকি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা নাকি এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন কিছু করেছি। অথচ ঢাকা শহরে কি একটু জ্যাম কমেছে? রাস্তাঘাটে কোথাও এক ইঞ্চি জায়গা খালি নাই। সর্বত্র জ্যাম!
ক্ষমতা থেকে এই সরকারকে যদি না সরানো হয় তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠেছে তা বন্ধ হবে না মন্তব্য করে রাশেদ খান বলেন, আজকে বাজারে আগুন লেগেছে! প্রতিটা জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। আজকে চালের কেজি ৭০ টাকা, প্রতিটা সবজির দাম ৮০ থেকে ১৫০ টাকার ওপরে। আজকে মাছের ধারে কাছে যাওয়া যায় না। মাংসের ধারে কাছে যাওয়া যায় না। সাধারণ জনগণের আজকে নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই এই ভোট চোর সরকারকে আমরা আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না। এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে না সরানো পর্যন্ত আমরা রাজপথে আন্দোলন বন্ধ করব না।
সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা নেই উল্লেখ করে তরুণদের উদ্দেশ্য রাশেদ খান বলেন, তরুণদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা রাজপথে নামুন। এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আফসোস করে বলেছিলেন, এই তরুণ সমাজ রাজপথে নামছে না। আমাদেরও একই কথা। আমরা যে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলাম তখন হাজারো তরুণ রাজপথে নেমে এসেছিল। কিন্তু যখন আমরা ভাত এবং ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি তখন তরুণরা রাজপথে নামছে না। তারা চাকরি এবং পড়ার টেবিলে বসে গিয়েছে। এদেশে যদি আপনার জীবনের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে চাকরি দিয়ে কি করবেন?
সমাবেশে থেকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা, গত রাতে মিরপুরে বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃট হয়ে চারজন নিহতের ঘটনায় সরকারকে দোষী করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা একটি পদযাত্রা করেন। পদযাত্রাটি উত্তর বাড্ডা ওভারব্রিজ সংলগ্ন ফলের দোকানের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু করে রামপুরা ব্রিজে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।