চূড়ান্ত প্রতিবেদন / দুই কারণে রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা
চলতি বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি। এতে দুর্ঘটনার পেছনে দুটি কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ফারস নিউজের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত যাত্রীর ওজন সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ দুই কারণকেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে সেনাবাহিনীর একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনার পেছনে কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ বা হামলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে দুটি কারণ শনাক্ত হয়েছে। এ দুটি হলো হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের জন্য আবহাওয়া উপযুক্ত ছিল না। এ ছাড়া এতে সক্ষমতার চেয়ে অন্তত দুজন বেশি বেশি যাত্রী ছিলেন। এর ফলে দুর্ঘটনায় পড়ে হেলিকপ্টারটি।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে দেশটির পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার। এ সময় হেলিকপ্টারে তিনি ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন।
প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়ে ২৩ মে প্রথম দেশটির সেনাবাহিনী প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে বলা হয়, হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষে গুলি বা বুলেটের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পাহাড়ের ঢালে আঘাতের কারণেই বিমানে আগুন ধরে যায় বলেও নিশ্চিত করেন তদন্তকারীরা।
সেনাবাহিনীর তদন্তে আরও বলা হয়, হেলিকপ্টারটি নির্ধারিত রুট থেকে বিচ্যুত হয়নি। এমনকি এটি বিধ্বস্ত হওয়ার দেড় মিনিট আগেও অন্য দুটি পাইলটের সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল।
ইব্রাহিম রাইসি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট তিনি। একাধারে রাজনীতিবিদ ও বিচারক রাইসি বিশ্ব রাজনীতিতেও অন্যতম প্রভাবশালী নেতাদের একজন। ইব্রাহিম রাইসি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে।
তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ইব্রাহিম রাইসিকে মনে করা হতো একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর-জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৮৯ থাকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেহরানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন রাইসি। ২০০৪ সাল থেকে তিনি এক দশক জুডিশিয়াল অথোরিটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে তাকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
প্রেসিডেন্ট রাইসি পরবর্তীতে ৮৮ সদস্যের বিশেষজ্ঞ সভার উপচেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ সভা। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।