November 27, 2024
লেটেস্টসম্পাদকীয়

চীনের জুগুয়ো পদ্ধতির কথা: ভালটা গ্রহণ ও অনুসরণে বাধা নেই

১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকের কথা, তখনো অভাবী এক দেশ ছিল চীন। রেশনের খাবার খেতেন মানুষ। এমনকি বেইজিংয়েও সপ্তাহে তিন দিন রাতে বিদ্যুৎ থাকত না। মোমবাতি জ্বালিয়ে অনেকে পড়াশুনা করেছেন। কিন্তু আজ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চীন অনেক এগিয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ও দৈনন্দিন প্রযুক্তি, সব আছে দেশটির হাতের কাছে। এখন যে কেউ তাঁর মুখ স্ক্যান করে একটা কোমল পানীয় কিনে ফেলতে পারেন। যে কোনো হোটেলে একজন অতিথীকে মানুষের বদলে টুথপেস্ট দিয়ে যেতে পারে একটা রোবট। পাহাড়ের দুর্গম রাস্তায় হাঁটছেন? দেখবেন, বাসিন্দাদের সৌরচালিত ওয়াকম্যানে গান শুনতে শুনতে হেঁটে যাওয়া, খুবই সাধারণ একটি দৃশ্য। আফ্রিকার শিশুদের ঘরেও পৌঁছে গেছে চীনা সৌরপ্রযুক্তি। আফ্রিকার যে শিশুরা কয়েক দিন আগেও মোমবাতির আলোয় পড়া লেখা করেছে, তারা আজ চীনা প্রযুক্তির কল্যাণে ধন্য। তারপরও, চীন এখনো উন্নয়নশীল রাষ্ট্র, মাথাপিছু জিডিপি দেশটির মাত্র ১০ হাজার ডলার। এইরকম চরম প্রতিকুলতাকে জয় করে তাঁরা এসব উদ্ভাবনকে সম্ভব করতে পেরেছেন। রহস্যটা কি?

চীন মনে করে উদ্ভাবন মানে শুধু আবিষ্কার করা নয়। যেমন আইফোন, থ্রিডি প্রিন্টিং কিংবা মঙ্গলে মানুষ পাঠানো। এটা হতে পারে নতুন ধরনের প্রয়োগ, নতুন ব্যবসায়িক মডেল, যা কিনা কম খরচে ভালো কাজ করবে। তারা মানুষের সমস্যার দ্রুত একটা সমাধান এনে হাজির করে, সস্তায় নানান ধরণের পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে ফেলে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, টিকটকের কথা। এই অ্যাপটি হয়তো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওনির্ভর প্রথম অ্যাপ নয়, কিন্তু সারা বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করছে। অনুরুপভাবে, চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডিও প্রথম নয়, কিন্তু তেসলার দামের তুলনায় তা অনেক সস্তা। একইভাবে চীনা মুঠোফোন আইফোনের মতো চমকপ্রদ নয়, কিন্তু আফ্রিকার অনেক দেশে তাদের বিশাল মার্কেট রয়েছে। এভাবেই চীনা প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটা বড় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, আর তা হলো উন্নত প্রযুক্তি হাতের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। প্রশ্ন হলো চীন কিভাবে কাজ করে? তার পদ্ধতি কি? চীনের সাফল্যের অন্যতম কারণ ‘জুগুয়ো’পদ্ধতি, অর্থাৎ ‘পুরো জাতি’ তারা এক হয়ে কাজ করেন। একটা ভাবনা বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে ব্যবসায়িকভাবে সফল করতে হলে লাগে উদ্ভাবন উপযোগী অনুকূল পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের গবেষণাগার ও শিল্পকারখানা, বিনিয়োগকারী, সবার পারস্পরিক সহযোগিতাতেই তাদের দেশে স্বল্প সময়ে এতটা উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

আমাদের সমাজেও এসব পদ্ধতি নিজেদের মত লাগসই করে নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালানো যেতে পারে। কে জানে হয়তো এরকম একটা কিছু প্রয়োগ করতে গিয়ে আরও উন্নততর কিছু পাওয়া যেতে পারে। কামনা করি, আমাদের শিক্ষায়নে পড়ালেখা প্রায়োগিক হোক। সমস্যার সমাধান নির্ভর হোক। আশার কথা সরকার এসব এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘আউটকাম বেজড্ এডুকেশন কারিকুলাম’ চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেভেলেও পাঠদান ও ক্লাশরুম অ্যাক্টিভিটির বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা হচ্ছে। আশা করা যায় ভাল ফল পাওয়া যাবে উদ্ভাবন ও উন্নয়নে।

শেয়ার করুন: