May 30, 2025
আন্তর্জাতিক

চীনের অবিবাহিতরা কেন বাংলাদেশি মেয়েদের বিয়ে করছে, পেছনে ভয়াবহ গল্প

বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাস গত রোববার (২৫ মে) বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে না করতে চীনা নাগরিকদের আহ্বান জানায়। তারা সতর্কতা দেয় এমনটি করলে তারা প্রতারণার শিকার হতে পারেন। এই বিয়েকে চীনা দূতাবাস ‘বিদেশি বউ কেনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বিষয়টি প্রথমে যে কেউ হাস্যরস হিসেবে নেবেন। তবে এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ গল্প।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে মঙ্গলবার (২৭ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়ছে, চীনের অবিবাহিত পুরুষরা বাংলাদেশিদের পাশাপাশি মিয়ানমার, নেপালসহ আরও কয়েকটি দেশের নারীদের বিয়ে করছে। বিশেষ করে চীনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অবিবাহিত পুরুষরা এটি করছে। এর কারণ পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম।

১৯৮০ সালের দিকে চীনে যখন ভ্রুণ হত্যা চূড়ান্তমাত্রায় পৌঁছেছিল তখন মেয়েদের ভ্রুণ নষ্ট করে ফেলা হতো। এতে করে গ্রামীন এলাকাগুলোতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। ওই সময় যারা জন্ম নিয়েছিল তারা এখন বিয়ের পরিপূর্ণ উপযোগী হয়ে ওঠেছে। কিন্তু মেয়ের সংখ্যা কম থাকায় তাদের অনেকে বিয়ে করতে পারছে না। আর এই সংকট দূর করতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ‘বউ কিনছে’ তারা।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত চীনের ৫ কোটি মানুষ কখনো হয়ত বিয়ে করবে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চীনে এখন মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর দাবি ওঠেছে। যেন বিবাহযোগ্যদের সংখ্যা বাড়ানো যায়।

লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিং গাও বলেছেন, “প্রত্যন্ত ও গ্রামীণ এসব অঞ্চলে বিয়ের চাহিদা বাড়ায় অবৈধ বিয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যারমধ্যে রয়েছে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো— বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শিশু ও মেয়েদের পাচার করে নিয়ে এসে বিয়ে করা।”

এরমধ্যে বাংলাদেশ ও নেপাল এই পাচারকারীদের অন্যতম মূল আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পাচারকারীরা এ দুটি দেশের তরুণীদের টার্গেট করছে। বাংলাদেশের অনেক মেয়ে দারিদ্রতা ও গ্রামাঞ্চলে বাস করায় পাচারকারীরা সুযোগ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

চীনে লিঙ্গ সমতার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২০০০ সালের শুরুর দিকে প্রতি ১২১ ছেলে শিশুর বদলে ১০০ মেয়ে শিশুর জন্ম হয়েছে।

যেহেতু পুরুষের সংখ্যায় মেয়ে কম তাই এ বিষয়টিকে দালালরা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। তারা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের চীনে ভালো কাজ ও উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু চীনে গিয়ে তারা বাস্তবতা টের পায়। সেখানে পৌঁছানো মাত্র তাদের কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এই নারীদের চীনের অনেক অবিবাহিতের কাছে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলারেও বিক্রি করা হয়। মূল্যটি নির্ধারণ করা হয় মেয়েদের বয়স ও সৌন্দর্য্যের বিষয়টি বিবেচনা করে।

তবে এই বিক্রির প্রক্রিয়াকে ‘বিয়ে’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিয়েতে মেয়েদের সম্মতি থাকে না। যখন পাচার করা নারীকে পাচারকারীরা ‘বিক্রি’ করে দিতে সমর্থ হয় তখন তাদের চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে আটকে রাখা হয়। এমনকি দ্রুত সময়ে সন্তান নিতেও তাদের চাপ দেওয়া হয়।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৯ সালে জানিয়েছিল, মিয়ানমারের নারীরা এসব পাচারের শিকার হচ্ছেন। তবে এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালেও পৌঁছে গেছে এই পাচারকারীদের সিন্ডিকেট।

তারা মেয়েদের চীনে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলের চীনা কৃষক ও শ্রমিকদের কমমূল্যে ‘ভিনদেশি বউ’ পাওয়ার লোভ দেখায়। ফলে তারা অর্থ খরচ করে বিয়ে করেন। কেউ যদি এইসব থেকে বাঁচতে চায় তখন অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হয়ে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হয়।

শেয়ার করুন: