October 23, 2024
আন্তর্জাতিকলেটেস্ট

ঘূর্ণিঝড় দানা পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে কাল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাত বা শুক্রবার ভোরের মধ্যে তা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বুধবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়া ঝড়টি আরো ঘনীভূত হয়ে দিনভর পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। ধীর গতিতে অগ্রসর হওয়া ঝড়টি আজ শেষ মুহূর্তে গতি বাড়িয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোকাস্টিং কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৬ মিনিটে দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ সম্পূর্ণ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখী। ঝড়টি কাল মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’

এর প্রভাবে বাংলাদেশ উপকূলে ঝড় বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝড়টি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ উপকূল দিয়ে যাচ্ছে তাই এর প্রভাবে বাংলাদেশ উপকূলে জলোচ্ছ্বাস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৬ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্যমতে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা থেকে ৫৫৩ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

এটি আরো ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা উত্তাল থাকায় মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলার সমূহকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটু লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। লঘুচাপটি গত মঙ্গলবার সকালে নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পর একই দিন রাতে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। পরে সকাল ৬টায় গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘দানা’। দানা কাতারের দেয়া নাম, এর অর্থ বিগ পার্ল বা বড় মুক্তা।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে প্রাক বর্ষা মৌসুম (এপ্রিল-মে) ও প্রি বর্ষা মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। ১৮৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি ঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে।

বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করা ঝড়গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে গিয়েছে। গত বছরই বছরের এ সময়ে তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। গত বছরের অক্টোবরে ‘হামুন’, নভেম্বরে ‘মিধিলি’র পর ডিসেম্বরে ‘মিগজাউম’ নামের তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল।

চলতি মাসের আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও এক থেকে তিনটি লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এদের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে বলা হয়েছিল। ইতোমধ্যে একটি নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করেছে।

শেয়ার করুন: