January 9, 2025
আন্তর্জাতিক

গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বল প্রয়োগের হুমকি ট্রাম্পের

উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান বলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত-প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানানোর পর ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের এমন হুমকির পর বুধবার ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলের নেতা কোপেনহেগেনে ডেনিশ রাজার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দ্বিতীয় বারের মতো গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের।

তার আগে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বানানোর জন্য তিনি ডেনমার্কের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি কিংবা অর্থনৈতিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেবেন না। একই দিনে ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চল ভ্রমণে গেছেন ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।

এদিকে, ডেনমার্কের রাজার সঙ্গে বৈঠক করতে মঙ্গলবার কোপেনহেগেনে পৌঁছেছেন গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে। যদিও সেখানে পৌঁছানোর আগেই রাজার সঙ্গে তার বৈঠক বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে ডেনমার্কের রাজকীয় আদালত বলেছেন, ডেনমার্কে রাজা ফ্রেডরিকের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া এই বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনও তথ্য জানাননি ডেনমার্কের রাজকীয় আদালত।

গত ২৩ ডিসেম্বর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অত্যাবশ্যক।”

ট্রাম্প পোস্ট দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে বলেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের। আমরা বিক্রির জন্য নই এবং কখনও এমনটা ঘটবে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছি এবং নিশ্চিতভাবেই তা আমরা বৃথা যেতে দেব না।”

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের আয়তন ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার ৫৮৩ জন। এই জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশই ইনুইট জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে হলেও দ্বীপটি ডেনমার্কের অধীন একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রদেশ। এ দ্বীপের বাসিন্দারাও ডেনমার্ক এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিক।

আর্কটিক এবং আটলান্টিক সাগরকে পৃথককারী দ্বীপটির নাম গ্রিনল্যান্ড হলেও উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থান হওয়ার কারণে বছরের বড় একটি সময় তুষারাচ্ছাদিত থাকে। দ্বীপটির ভূপৃষ্ঠের গভীরে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা অবশ্য নতুন নয় ট্রাম্পের। এর আগে ২০১৯ সালে যখন প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে সময় একবার তিনি বলেছিলেন, ‘কৌশলগত কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এ দ্বীপটি কিনে নেওয়া।

শুধু গ্রিনল্যান্ড নিয়েই তার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। গত ২২ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় পানামা খাল দখল করার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

ট্রুথ সোশ্যালে পানামা খালের একটি ছবি পোস্ট করেন ট্রাম্প। সেই ছবিতে খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ছবি রয়েছে। ছবির নিচে ট্রাম্প লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের খালে সবাইকে স্বাগতম।”

তার এই ছবি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রকাশ করে পানামার প্রেসিডেন্টের দপ্তর। সেই বক্তব্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো বলেন, “পানামা খাল ও তার আশপাশের প্রতি ইঞ্চি জমির মালিক পানামা এবং এটিই বলবৎ থাকবে। এই ব্যাপারটি পানামার সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এ ইস্যুতে পানামা কখনও আপোস করবে না।”

শেয়ার করুন: